ক্ষণস্থায়ী গ্ল্যামারের রাংতায় মোড়ানো এক দুনিয়া হলিউড। যখন তখন সারাক্ষণ চারপাশে ফ্ল্যাশলাইটের অতি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। সেখানে আলোর থেকেও উজ্জ্বলতম এক নাম টম হ্যাংকস। আজ ফরেস্ট গাম্প থুক্কু টম হ্যাংকসের জন্মদিন। জীবনের ৬১তম বছরে যাত্রা শুরু করলেন হলিউডের এই গুণী অভিনেতা।
অভিনেতা হিসেবে টমের যাত্রার শুরু আশির দশকে। থিয়েটার, ছোট পর্দা পেরিয়ে বড় পর্দায় আগমন। প্রথমদিকের সিনেমার তালিকায় রয়েছে স্প্ল্যাশ এর মত ফ্লপ ছবিও। আবার বিশ্ব জুড়ে সবার মনে এখনো দাগ কেটেছেন ফরেস্ট হয়ে। করেছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের দক্ষযজ্ঞের মধ্যে এক অনমনীয় সৈনিকের চরিত্র, যে খুঁজে ফিরছে রায়ানকে। অভিনয় জীবনে টানা দু’বার পেয়েছেন অস্কার। ফিলাডেলফিয়ায় এইডস রোগে আক্রান্ত এক সমকামী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন নিজের প্রথম অস্কার। আর কিংবদন্তী ফরেস্ট গাম্প চরিত্রটির জন্য পেয়েছেন নিজের দ্বিতীয়টি।
পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই চরিত্র পছন্দে সচেতন ছিলেন টম। সেকারণেই দর্শক পেয়েছে নিপুণ অভিনয়, বিচিত্র সব চরিত্র। অসাধারণ এই সিনেমার তালিকা গড়তে গিয়ে অভিনেতা-পরিচালকের সার্থক ও আলোচিত জুটি তৈরি করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গের সাথে। টমের অভিনীত সিনেমা থেকেই অস্কার নমিনেশনের দেখা পেয়েছেন আরো অনেক কৃতী পরিচালক।
নিজের অভিনয় জীবনে টম ৫ বার অস্কারের নমিনেশন পেয়েছেন। আজ প্রিয় এই অভিনেতার সেই সিনেমাগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া যাক-
১-বিগ
১৯৮৮ সালের এই সিনেমার গল্প অনেকটাই রবীন্দ্রনাথের ‘ইচ্ছেপূরণ’- এর ডিট্টো। ১২ বছরের এক কিশোর থেকে রাতারাতি ৩০ বছরের যুবকে পরিণত হয় জশ (টম ছাড়া এমন ইচ্ছে কারইবা পূরণ হয় বলুন?)। কিশোর মন নিয়ে যুবকের শরীরে আটকে পড়া চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন টম, ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত মনোনীত হন অস্কারের জন্য, যদিও সে বছর খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে।
২- ফিলাডেলফিয়া
ফিলাডেলফিয়া ১৯৯৩ সালে সামাজিক ইস্যু নিয়ে নির্মিত তারকাবহুল এক প্রথম সারির ছবি। সমাজের কঠিন সব বাস্তবতার মুখোমুখি করা এক স্ক্রিপ্টে এন্ড্রু চরিত্রে অভিনয় করেন টম। এইডসে আক্রান্ত হবার পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, সমকামীতার জন্য যে অফিসের অনেকের চক্ষুশূল ছিল আগে থেকেই । তবে হার না মানা এন্ড্রু অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে এ বৈষম্যের বিচার দাবি করে কোর্টে। এই ছবিতে কোর্টরুম ড্রামার পাশাপাশি রয়েছে ভালোবাসার বন্ধন, আইনজীবী জো-মিলার আর এন্ড্রুর পারস্পরিক শ্রদ্ধার গল্পও। বিশেষ করে শেষ সময়ে হাসপাতালের মৃত্যুর প্রতীক্ষায় থাকা টমের আবেগী অভিনয় ছুঁয়ে যাবে বোধসম্পন্ন সকল দর্শককেই। আর এই সিনেমাই টম হ্যাংকসকে এনে দেয় প্রথমবারের মতো অস্কারে অলংকৃত হবার সৌভাগ্য।
৩- ফরেস্ট গাম্প
ছোট্ট ফরেস্ট বেড়ে ওঠে শরীর আর দেহের সকল প্রতিকূলতাকে উতরে। আর তার ছোট্টবেলার প্রেম জেনির সাথে নিজের জীবনের নানা মুহূর্তে বার বার দেখা হয় ফরেস্টের। পরিচালক ফরেস্টের চোখ দিয়ে দেখান উত্তাল মার্কিন এক রাষ্ট্রের নানা সময়ের নানা গল্প। ভয়াবহ ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আমেরিকার বর্ণ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, এইচআইভি তথা এইডসের প্রকোপ। সাথে জীবনযুদ্ধে জটিলতায় আক্রান্ত প্রেমিকা জেনি আর সরল ফরেস্টের রৈখিক যাত্রা। ফরেস্টের সরলতায় এমনকী নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে যুদ্ধাহত লেফটেন্যান্ট ড্যান, বাবা পরিবার। ১৯৯৪ সালে নির্মিত এই ছবিটি আজো মার্কিন আশাবাদের এক রঙিন স্বপ্ন দেখায় হাজারো মানুষকে। ফরেস্ট চরিত্রে অভিনয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সেরা অভিনেতার অস্কার ঘরে তোলেন টম হ্যাংকস।
৪-সেভিং প্রাইভেট রায়ান
গল্পটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। একদল হার না মানা সৈনিকের গল্প। যুদ্ধের ময়দান থেকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে রায়ানকে। কেননা রায়ানের পরিবারের বাকি সকলকে কেড়ে নিয়েছে হিটলারের ফ্যাসিবাদী সেনারা। বেঁচে থাকা সেই রায়ানকে উদ্ধারের দায়িত্ব পড়েছে জন এইচ মিলারের ওপর। টম করেছিলেন কড়া নীতিবাগীশ কিন্তু প্রখর বাস্তববাদী সেই চরিত্রটি। দলের অন্য সেনা সদস্যদের সাথে নানান টানপোড়েন আর জার্মানদের হামলার সাসপেন্স পেরিয়ে শেষমেশ খোঁজ মেলে রায়ানের। ঘরে ফেরে রায়ান যদিও ফেরা হয় না মিলারের।
৫- কাস্ট অ্যাওয়ে
এর থেকে ভালো অ্যাড ওগলভিও তৈরি করতে পারতেন না ফেডএক্সের জন্য। ব্যস্তসমস্ত ফেডএক্স কর্তা টম বিমান দুর্ঘটনায় একাকী আটকা পড়েন নির্জন এক দ্বীপে। এরপর চলে শুধু টিকে থাকার সংগ্রাম। এ যেন বিংশ শতাব্দীর নতুন এক ইউলিসিস কিংবা রবিনসন ক্রুশোর গল্প। শেষপর্যন্ত একদিন স্বাভাবিক পৃথিবীর বুকে ফিরে আসে চাক, যদিও নতুন সে পৃথিবীও নির্জন সেই দ্বীপের মতোই মনে হতে থাকে তার। এই ছবিটিও অস্কার মনোনয়ন এনে দেয় টম হ্যাংকসকে।