গেম অফ থ্রোনসে ড্রাগন বা অলৌকিক কল্পগল্পের উপাদানের বাইরেও বাস্তবের জটিল রাজনৈতিক সমাজের একটা চিত্র দেখা যায়। অনেক দর্শকের কাছে মূল গল্পের এই দিকটার আকর্ষণ কম না। সিংহাসন দখলের লড়াই সেই প্রথম সিজন থেকেই দেখছে দর্শক। রাজায় রাজায় যুদ্ধ চলেছে প্রায় পুরো দুই-তিন সিজন ধরে। তারপর রাজাবদল আর রাজনীতির পালাবদলে এখন রাণীদের লড়াই চলছে। দুই রাণীর সাথে তৃতীয় আর চতুর্থ পক্ষে তথাকথিত রাজারাও তাদের অনুগ্রহপ্রার্থী হয়ে দেখা দিচ্ছেন, যা শুধু ওয়েস্টেরোসের ইতিহাসেই অভূতপূর্ব না, বাস্তবের অনেক রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও বেশ বিরল। আজকের রিভিউতে মূলত রাজনীতির সেদিকটাতেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে। (জন স্নো আর ইউরন গ্রেজয়কে কেন তথাকথিত রাজা বলা হলো তার একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হবে।)
ড্রাগনস্টোন
সিজন প্রিমিয়ার ঠিক যে জায়গায় শেষ হয়েছিল, দ্বিতীয় পর্ব “স্টর্মবর্ন” ঠিক সেখান থেকেই শুরু হলো। ড্রাগনস্টোন প্রাসাদের প্রকাণ্ড মিনার ‘স্টোনড্রাম’-এর একদম চূড়ার কক্ষটির নাম ‘চেম্বার অফ দ্যা পেইন্টেড টেবল’। প্রথম ও তৃতীয় দৃশ্য দুটি এই কক্ষেই, আর মাঝের অন্য আরেকটি দৃশ্য এর পাশের সিংহাসনের কক্ষে। প্রথম দৃশ্যে ডেনেরিস, লর্ড টিরিয়ন ও লর্ড ভ্যারিসের সাথে কথা বলছে। ভ্যারিসকে বেশ কঠিন জেরার মুখে পড়তে হলো। প্রথম সিজন থেকেই বেশ কয়েকবার ডেনেরিসের ওপর আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, যার প্রায় সবগুলোই ভ্যারিস ওয়েস্টেরোস থেকে পরিচালনা করেছিল। প্রশ্ন হলো এই জেরা এতদিন পরে কেন? ভ্যারিসকে মিরিনে দেখামাত্রই ডেনেরিস তাকে গুপ্তচর সন্দেহে বন্দি করার কথা! অথচ তাকে নিজের উপদেষ্টাদের মাঝে স্থান দিয়েছে সে এই বিষয়ে কথা না বলেই! ডেনেরিসের অভিযোগটি জোরালো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার মতে ভ্যারিস কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ রাজা উন্মাদ হয়ে গেলে বা রাজ্য পরিচালনায় কোন আগ্রহ না দেখালে তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সে আগেও বেশ কয়েকবার করেছে। ভ্যারিসের উত্তরে উপরের সংলাপটুকু বলে। একজন শক্তিশালী উপদেষ্টা ক্ষমতার উঁচুতম স্থানে বসা নেতার খুব কাছাকাছি অবস্থান করেন। তার অনেকগুলো কাজের একটি সময় সময় নেতাকে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত রাখা। আর এ’কাজে সফল হতে হলে তাকে সরাসরি বলতে হবে নেতার কোথায় ভুল হচ্ছে। এরকম আচরণ গত পর্বে সানসা করেছিল, জন স্নোয়ের একটি সিদ্ধান্তে সরাসরি যুক্তিসহ আপত্তি জানিয়েছিল। নর্থের বিশেষ করে স্টার্কদের মাঝে এ চর্চা বিদ্যমান থাকলেও দক্ষিণের রাজা-রাণীরা এটা প্রায়শই মেনে নিতে পারেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এহেন দ্বিমতে তারা ক্ষেপে ওঠেন। নিজের কর্তৃত্বের ও ক্ষমতার ওপর আঘাত, তথা নিজের ওপরেই আঘাত ভেবে বসেন। যে কারণে নেতার বা রাজার সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলেও তারা নীরবে তা পালন করে। আর অন্তরে জমতে থাকে চাপা ক্ষোভ, যা বুদ্ধিমানেরা ভ্যারিসের মতো ষড়যন্ত্রে কাজে লাগায়। ম্যাড কিং, রবার্ট, কিংবা জফ্রি – এরা কেউই ভিন্নমত সহ্য করতে পারতো না, তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো। ফলাফল প্রত্যেকেই হাতেনাতে পেয়েছে, নিজেরই বিশ্বস্তদের মাঝে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদেরকে মেরেছে। ম্যাড কিংয়ের বেলায় জেইমি, রবার্টের বেলায় সার্সেই, জফ্রির বেলায় লিটলফিঙ্গার ও ওলেনা টিরেল। মজার ব্যাপার হলো ভ্যারিস নিজে সরাসরি কোন রাজার মৃত্যুর জন্য এখনো দায়ী নয়। সে বরং রাজাদের প্রতি বেশ অনুগতই ছিল। ম্যাড কিংয়ের ব্যাপারে নিন্দা করলেও তার বরাবরই উদ্দেশ্য ছিল টারগারিয়েনদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা। হতে পারে এর পেছনে নিজের শৈশবের ধারণা কাজ করেছে। টারগারিয়েনদের দীর্ঘ শাসনামলের অল্প কিছু সময় ছাড়া সাম্রাজ্যে কমবেশি শান্তিময় পরিবেশ ছিল। যে পরিবেশে তার মতো একজন ‘ঊনপুরুষ’ সম্মান ও ক্ষমতার অবস্থানে উঠে আসতে পারে। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো লিটলফিঙ্গারও ভ্যারিসের মতো নিজের মতামতকে রাজার ক্ষমতা ও যোগ্যতার চেয়ে বেশি মূল্য দেয়। অর্থাৎ প্রয়োজনে রাজা বদলানোর জন্য সব ব্যবস্থা সেও নিতে পারে। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই দেখা যায় এর পুরোটাই তার মুখোশ, সে মূলত কোন রাজা-প্রজার পক্ষ দেখে না; পুরোটাই নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর ক্রমাগত চেষ্টা। ভ্যারিস তার ঠিক উল্টো নীতির কূটচাল চালে। তার নিজের সিংহাসনের প্রতি কোন মায়া বা টান নেই। বরং সিংহাসনে যে বা যিনি বসবেন, তিনি যদি জনগণের হিতার্থে কাজ করে তাহলেই ভ্যারিস তাকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাবে।
আর এখানে এসেই ওয়েস্টেরোসে ক্ষমতার লিঙ্গবদলের সাথে সাথে পালাবদলেরও আভাস পাওয়া যায়। সামন্ততান্ত্রিক ও পুরুষতন্ত্রের দাপুটে ব্যবস্থায় নারীর অবস্থান ছিল ভোগ্যবস্তুর, স্ত্রীর, অধীনস্থের। বংশানুক্রমিকভাবে রাজা নির্ধারিত হতো, তা সে রাজা নিষ্ঠুর, খামখেয়ালি, বদমেজাজি, কিংবা আদতে শাসন করার কাজে অক্ষম হলেও কিছু করার থাকতো না। কিন্তু এখন সে দান উল্টে গেছে। নারী চরিত্রগুলো ক্ষমতা দাবি করছে। শুধু তাই না, ডেনেরিসের মাধ্যমে সামন্ততন্ত্রের প্রাচীনতম প্রথাটিও হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। রাজা বা রাণীকে এখন যোগ্য হতে হবে। নিজের শাসনকৌশল দিয়ে জনগণ ও অভিজাতদের মন জয় করতে হবে। সামন্ততন্ত্র মানবিক ও জনগণের হয়ে উঠলে একসময় কি আমরা ওয়েস্টেরোসেও সাম্যের গান শুনতে পাবো?
দ্বিতীয় দৃশ্যটি ছিল রেড প্রিস্টেস মেলিসান্দ্রের সাথে তাদের কথোপকথন। জন স্নো তাকে নর্থ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর সে ড্রাগনস্টোনে এসে ডেনেরিসের সাহায্য চায়। ‘প্রিন্স দ্যাট ওয়াজ প্রমিসড’ ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করে মেলিসান্দ্রে বোঝাতে চাইলো যে ডেনেরিস এই ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলে যায়। আশা করা যায় অচিরেই সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে চেম্বার অফ দ্যা পেইন্টেড টেবল ঘিরে ডেনেরিসের যুদ্ধ-উপদেষ্টাগণ তথা পুরো ওয়ার কাউন্সিলের। সে কাউন্সিলে টিরিয়ন আর ভ্যারিস ছাড়াও লেডি ওলেনা টাইরেল, ডর্নের ইলারিয়া স্যান্ড, আয়রন আইল্যান্ডের ইয়ারা ও থিওন গ্রেজয় ছিল। টিরিয়নের বলা “কুইন অফ দ্যা অ্যাশেজ” নামটা বোধহয় ডেনেরিসের পছন্দ হয়েছে। সাত রাজ্য দখল করতে গিয়ে সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার কোনো মানে হয় না। এতদিন ধরে ‘স্লেভার্স বে’তে থেকে ডেনেরিসের অন্তত সে শিক্ষাটুকু হয়েছে। তাই তাদের মূল পরিকল্পনা ল্যানিস্টার হাউজকে দমন করা। একইসাথে অন্যান্য হাউজদের যথাসম্ভব অক্ষত রাখা, যেন রাজ্যজয়ের পর তাদের সমর্থন পাওয়া যায়। রাজতন্ত্রে এই সম্ভ্রান্ত হাউজদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই টিরিয়ন কৌশল বাতলালো যে আনসালি’ড সৈন্যরা ক্যাস্টারলি রক-এ গিয়ে ল্যানিস্টার হাউজের মূল ঘাঁটিতে আঘাত হানবে। আর এদিকে ইয়ারা ও থিওন তাদের নৌবহরে করে ডর্নের সৈন্যদের নিয়ে এসে কিংস ল্যান্ডিংয়ের সমুদ্রপথ আটকে দিবে। স্থলপথে রাজধানীকে ঘেরাও করবে টাইরেলের সৈন্যবাহিনী। একজন সেনাপতি না হয়েও টিরিয়নের এহেন রণকৌশল প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও তার এই কৌশলের মূল দুর্বলতা এতে ল্যানিস্টারদের কৌশল সম্পর্কে কোন চিন্তাভাবনা করা হয় নি। ঘেরাও করে থাকার সময় যদি বাইরে থেকে কোন আঘাত আসে সেটা কীভাবে সামলানো যায়, বা সেটার ব্যাপারে কী কী সতর্কতা নেয়া যায়, তা জানা হলো না। যুদ্ধ-উপদেষ্টাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনটাও লক্ষণীয় ছিল। এমন না যে এরা অনেকদিন ধরেই একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। এখন সার্সেইয়ের রাজত্বের বিরোধিতা এদের একমাত্র লক্ষ্য বলেই এই একতা। কিন্তু এর মাঝেও মতবিরোধ, স্বার্থবিরোধ আছে। ওলেনা টাইরেল টিরিয়নের এই সাবধানী ও কৌশলী পরিকল্পনার সাথে একমত নন। এজন্য আলোচনার শেষে যখন ডেনেরিস একলা তার সাথে কথা বলতে চাইলো, তিনি তাকে সাবধানী পথ ছেড়ে সরাসরি আক্রমণের পরামর্শ দিলেন। তার মূল উদ্দেশ্য সার্সেইয়ের পতন। যে কোন মূল্যে সেটা হাসিল হলেই তার প্রতিশোধ সম্পন্ন হবে। ডেনেরিস শাসন করলো না অন্য কেউ করলো, তাতে তার কিছু এসে যায় না।
ওলেনা বুদ্ধিমান, তাই সবার সামনে টিরিয়নের কৌশলকে নাকচ না করে তিনি ডেনেরিসকে একলা পেয়ে কথাটি বলেছেন। ইলারিয়ার বুদ্ধি সে তুলনায় একটু কমই আছে। টিরিয়নের সাথে তার আলাদা বোঝাপড়াও বাকি, কারণ টিরিয়নের জন্য ট্রায়াল বাই কমব্যাট লড়তে গিয়েই তার প্রেমিক ওবেরিন মার্টেল মারা গিয়েছিল। টিরিয়নও বলতে ভুললো না যে ইলারিয়া প্রতিশোধস্বরূপ সার্সেইয়ের মেয়ে মার্সেলাকে খুন করেছিল। মার্সেলা কোন অপরাধ করেনি, এমনকি ওবেরিন নিজে মার্সেলার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল। ওবেরিনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সেই মার্সেলাকেই মারতে হলো? ইলারিয়ার উত্তরটাও খোঁড়া অজুহাত মনে হয়েছে। ‘দেয়ার আর নো ইনোসেন্ট ল্যানিস্টার্স’ – এই কথার আদৌ কোন যুক্তি নেই। মার্সেলা আসলেও কোন অপরাধ করেনি।
যদিও জর্জ আর আর মার্টিনের এই জগতে প্রায় কখনই অপরাধী তার অপরাধের শাস্তি পায় না, ভালোরা কষ্ট করে আর খারাপেরা মোটামুটি ভালোই থাকে, তবুও এই পর্বের শেষদিকে ইলারিয়া ও তার স্যান্ডস্নেকদের পরিণতি দেখে রীতিমত ভালো লেগেছে। আর কিছু না হোক, গল্পের খাতিরে এই দুঃখজনক ডর্ন-কেন্দ্রিক ঘটনাবলী শেষ হতে চলেছে। ইউরন গ্রেজয়ের অতর্কিত হামলায় ইয়ারা ও থিওনের নৌবাহিনী পুরোপুরি পরাস্ত। ওবারা ও নাইমেরিয়া স্যান্ডকে ইউরন নিজেই হত্যা করলো। আর ধরা পড়লো ইলারিয়া ও তার মেয়ে টাইয়িন স্যান্ড। ইউরনের নিজের হিসাব-নিকাশও বাকি ছিল ইয়ারা ও থিওনের সাথে। ইয়ারাকে ধরার পরে থিওনের উদ্দেশ্যে ইউরনের হুঙ্কার ক্রমেই র্যামসে বোল্টনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। এখানে একটা কথা না বললেই না। এই পর্বে থিওনের সংলাপ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে এই দৃশ্যে কোন কথা না বলে শুধুমাত্র মুখভঙ্গিতে নিজের নির্যাতিত মানসিক বিকলতার যে অভিনয় অ্যালফি অ্যালেন ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা আসলেই প্রশংসাযোগ্য। থিওন যে অমানুষিক নির্যাতনের ভেতর দিয়ে গেছে তাতে তার পক্ষে আর কখনই নিজের পুরনো সত্ত্বা ফিরে পাওয়া সম্ভব না। হয়তো মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে সে নিজেকে আবার ঠিকঠাক করে নিচ্ছিল, কিন্তু এরকম কোন মুহূর্তের চাপ নেয়ার মতো মানসিক জোর তার নেই। ওরকম পরিস্থিতিতে তাই তার ওভাবে পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। এমন আকস্মিক চাপের মুহূর্তে আমাদের মস্তিষ্কে ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ রেসপন্স জেগে ওঠে। যারা থিওনের মত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, তাদের লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে থিওন এর আগে যতবারই মুক্তির চেষ্টা করেছে বা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে, ততবারই নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়ে গিয়েছে। তাই তার চিন্তাভাবনায় সেই নিপীড়নের ভয় এক মুহূর্তেই দানবের রূপ নিতে পারে, আর সাথে সাথে তাকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে। থিওনের পুরো চরিত্রটিই এক বেদনাদায়ক পরিণতির গল্প।
ইউরনের এই হামলার একটি ভালো দিক হচ্ছে গল্পের খাতিরে ডেনেরিসের ক্ষমতা এখন কিছুটা হলেও কমে আসলো। প্রাথমিকভাবে দুই-তিনটি রাজ্যের শক্তিশালী হাউজের সমর্থন আর সাথে এসোস থেকে আনা ডোথরাকি ও আনসালি’ড বাহিনী ডেনেরিসকে পুরোপুরি অপ্রতিরোধ্য করে দিয়েছিল। এখন কিছুটা ভারসাম্য ফিরে এল। গ্রেজয় আর ডর্নের কোন সমর্থনই আর টিকে রইলো না। একদিকে শুধু টাইরেল স্থলবাহিনী আর অন্যদিকে ডোথরাকিরা কিংস ল্যান্ডিংয়ে হামলা করতে পারবে। আর আনসালি’ডরা ইতোমধ্যে ক্যাস্টারলি রকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
উইন্টারফেল
রাজনৈতিক কৌশলের খেলায় উইন্টারফেলেও বেশ বড়োসড়ো ঘটনা ঘটে চলেছে। ডেনেরিসের হয়ে টিরিয়ন চিঠি পাঠিয়েছে জনের কাছে। ড্রাগনস্টোনে গিয়ে তাকে ডেনেরিসের সামনে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব, অতীতে নর্থ থেকে রাজার তলবে দক্ষিণে গিয়ে কোন স্টার্কই ঠিকমতো ফিরে আসতে পারেনি। জন অতীত নিয়ে চিন্তিত না, তার সমস্ত চিন্তা (বা দুশ্চিন্তা) নাইট কিং এবং তার মৃতবাহিনী নিয়ে। ওল্ডটাউন থেকে স্যাম জানিয়েছে যে ড্রাগনস্টোন দ্বীপের নিচে ড্রাগনগ্লাসের এক ডুবন্ত পাহাড় লুকিয়ে আছে। হোয়াইট ওয়াকারদের ধ্বংস করার এটাই একমাত্র উপায়। তাই ঝুঁকি মাথায় নিয়েও জন সিদ্ধান্ত নেয় ড্রাগনস্টোনে যাওয়ার। এসময়ে তার ‘কাউন্সিল’-এর সাথে আলোচনার দৃশ্যটি গুরুত্বপূর্ণ নানা কারণেই। প্রথমত এই বোধহয় প্রথম লেডি লিয়ানা মরমন্ট তার সাথে দ্বিমত পোষণ করলো। দ্বিতীয়ত সানসার আপত্তির পেছনেও যথেষ্ট যুক্তি আছে। অতীতে সানসা-জনদের দাদা রিকার্ড স্টার্ক ডেনেরিসের বাবা ম্যাড কিংয়ের তলব পেয়েছিল। জনের মা লিয়ানা স্টার্ক রেয়গার টারগারিয়েনের সাথে পালিয়ে গেলে লিয়ানার বড় ভাই ব্র্যান্ডন স্টার্ক কিংস ল্যান্ডিংয়ে গিয়ে হাজির হয়। ব্র্যান্ডন বরাবরই রগচটা মেজাজের। কিংস ল্যান্ডিংয়ে গিয়ে ম্যাড কিংয়ের সামনে হাজির হয়ে সে সরাসরি রেয়গারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ম্যাড কিং উপকারী পরামর্শই ভাল চোখে দেখতো না, সেখানে নর্থের এক ছেলে এসে তার ছেলের নামে অভিযোগ করছে, এত বড় স্পর্ধা! ব্র্যান্ডন বন্দি হলো, আর তলব করা হলো রিকার্ড স্টার্ককে নিজের ছেলের জবাবদিহিতার জন্য। পরিণতি কারো জন্যেই সুখকর হয়নি। ম্যাড কিংয়ের দরবারেই রিকার্ড স্টার্ককে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। পুরোটা সময় ব্র্যান্ডন স্টার্কের গলায় দড়ি পড়িয়ে একটু দূরেই একটা তলোয়ার রেখে দেয়া ছিল। ব্র্যান্ডন যতোই চেষ্টা করছিল তলোয়ারটা নিয়ে নিজেকে মুক্ত করার, ততোই দড়ির ফাঁস তার গলায় আরো শক্ত হয়ে বসে যাচ্ছিল। ব্র্যান্ডন আর রিকার্ডের মৃত্যুর পর নেড স্টার্ক উইন্টারফেলের লর্ড হলো, তার সাথে যোগ দিল পুরো নর্থের শক্তি। বছর পেরোনোর আগেই ম্যাড কিংকে হত্যা করলো জেইমি। ইতিহাস থেকে যদি কিছু শেখার থাকে, তাহলে সানসার শঙ্কা অমূলক নয়। জনের কথাতেও যুক্তি আছে। এইসব ইতিহাসের শিক্ষাই বৃথা হয়ে যাবে আসন্ন ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে। এমন তুচ্ছ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর একমুহূর্ত সময়ও নেই। ডেনেরিসের সাথে জনের চরিত্রেরও একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে। ডেনেরিস ড্রাগনের ‘জন্ম’ মুহূর্ত থেকে নিজেকে ওয়েস্টেরোসের রাণী ভাবতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে তার মনে এই ধারণা পাকাপোক্ত হয়েছে। আয়রন থ্রোনকে সে শুধু নিজের জন্মগত অধিকারই ভাবে না, পুরো স্লেভার্স বে’ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতায় যোগ্যও মনে করে। অন্যদিকে জন ছোট থেকে কখনই নেতৃত্বের কথা ভাবেনি। নাইটস ওয়াচে থাকার সময়ে লর্ড কম্যান্ডার হতেও তার অতো আগ্রহ ছিল না। হার্ডহোমে নাইট কিং ও তার মৃতবাহিনীর সাথে যুদ্ধের পরই তার মাঝে সবাইকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা দেখা দেয়। যদিও নেতৃত্বের পুরোটা যদি দক্ষতা আর সিদ্ধান্ত নেয়ার জোরের উপরে নির্ভর করতো, তাহলে তাকে নিজের ভাই-বেরাদরদের হাতে মরতে হতো না। নিজের মনে ক্ষমতা কামনা করা বা ক্ষমতা ধরে রাখতে চাওয়ার চিন্তা না থাকলে এসব খুঁটিনাটি কিন্তু জরুরি বিষয় নজর এড়িয়ে যায়। আর তখনই বড় ধরণের ভুল হয়। যে ভুলের মাশুল বহু নেতাকে নিজের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। রব স্টার্কের পরিণতিও এমনটাই হয়েছিল। মৃত্যুর জগৎ থেকে ফিরে এসেও জনের মাঝে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি, তবে এবার অন্তত সে নিজের পরিকল্পনা আশেপাশের অনুসারীদের জানাচ্ছে। কেন সে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটাও ব্যাখ্যা করছে।
“I never asked for it. But I accepted it because the North is my home. It’s part of me, and I will never stop fighting for it, no matter the odds.”
জন চলে যাওয়ার আগে নর্থের দায়িত্ব সানসাকে দিয়ে গেল। জনের উক্তিটি লক্ষণীয়, সে মনে করছে নর্থকে সে তার চেয়ে যোগ্যতর নেতৃত্বে ছেড়ে যাচ্ছে। বলাই বাহুল্য যে জন প্রকৃতপক্ষেই সানসার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তাকে মূল্য দেয়। সানসা যতবারই তার বিরোধিতা করেছে, তার পেছনে যুক্তি ও চিন্তাভাবনা থেকে করেছে। একজন নেতার জন্য এমন যুক্তিবাদী, সতর্ক সহকারী অনেক বেশি দরকার। জনের এই উক্তি শুনে সানসার পাশাপাশি অনেক দর্শকও হয়তো থমকে গেছেন। কারণ অনেকেই সানসার এই বুদ্ধিমত্তাকে ‘বিরক্তিকর’ বা ‘সমস্যাজনক’ মনে করেন। হয়তো তাদের মনে সানসার সেই ছোটবেলার বোকামিগুলোই ছাপ ফেলে গেছে, কিংবা সানসার সেইসময় থেকে এইসময়ের সংগ্রামের প্রভাব বাইরে থেকে দেখা যায় না বলে তারা বুঝে উঠতে পারেননি। শুধু ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, জন তার পাশে সানসার মতো উপকারী পরামর্শদাতা পেয়েছিল, কিন্তু সানসার পাশে এখন অমন কেউ নেই। তাও অতোটা অসুবিধা হতো না, কিন্তু যাবার আগে লিটলফিঙ্গারকে হুমকি দিয়ে বিষয়টা ঘোরালো হয়ে উঠলো। লিটলফিঙ্গার এখন নানাভাবে উইন্টারফেলে জনের স্থান নড়বড়ে করে দেয়ার চেষ্টা করবে।
কিংস ল্যান্ডিং
কিংস ল্যান্ডিংয়ে সার্সেই টাইরেল হাউজের ব্যানারম্যান অর্থাৎ ‘রিচ’ রাজ্যে টাইরেলদের অধীনস্থ অন্যান্য হাউজের লর্ডদের তলব করেছে। সার্সেইয়ের নেতৃত্ব মূলত ভয়ভীতিকেন্দ্রিক। হয় তুমি আমার সাথে আছো, নয়তো তুমি আমার বিপক্ষে, আর আমার বিপক্ষের সকলের নাশ হোক – এই হচ্ছে মোটামুটি তার পরিকল্পনা। টাইরেল ব্যানারম্যানদের সার্সেই ডেকে ওলেনা টাইরেলের ব্যাপারে সাবধান করে দিল। ওলেনা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ডোথরাকি আর আনসালি’ডদের ওয়েস্টেরোসে ডেকে এনেছে, যারা কিনা ‘অসভ্য’ ও ‘বহিরাগত’। ডেনেরিসের একমাত্র পরিচয় সে ম্যাড কিংয়ের মেয়ে। তার কীর্তিকলাপের খবর স্লেভার্স বে’ থেকে কিংস ল্যান্ডিংয়ে এসেছে। আসার আগে সেখানে ইয়ুঙ্কাইদের পুরো নৈবাহিনী ডেনেরিস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে এসেছে। মিরিনের সম্ভ্রান্তদের ক্রুশবিদ্ধ করে মেরেছে, যদিও সার্সেই চেপে গেল যে সেসব সম্ভ্রান্তেরা ডেনেরিসের আসার পথে একশ ষাট মাইলের পথের পাশে একেকটা শিশু-কিশোরকে ক্রুশবিদ্ধ করে রেখেছিল। এগুলো মোটামুটি খুব পরিচিত কৌশল। বহিরাগত ও অচেনাদের ব্যাপারে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের প্রভাবিত করে নিজের উদ্দেশ্য অনেক নেতাই হাসিল করে থাকেন। শুধু ওয়েস্টেরোসেই না, আমাদের বাস্তব পৃথিবীতেও আমরা অহরহ এমনধারা রাজনীতির দেখা পাই। সার্সেইয়ের শাসন পদ্ধতি যে কোন ভগ্নপ্রায় জনপদে পুরোপুরি সফল হয়। গত সিজনের শেষ পর্বের ভীতিকর ধ্বংসযজ্ঞ আর গণহত্যার পর কিংস ল্যান্ডিংসহ পুরো দক্ষিণ-রাজ্যগুলোতেই এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সবচেয়ে আরাধ্য ধর্ম-উপাসনালয় উড়ে গেছে, মারা গেছে রাজা-রাণী, রাণীর পুরো পরিবার, রাজধানীর অসংখ্য সম্ভ্রান্ত পরিবার, ফেইথ মিলিট্যান্টের মত জনসমর্থিত উগ্রবাদীর দল। এই ধাক্কা একেবারে কম না। টাইরেল আর ডর্ন প্রকাশ্যেই ল্যানিস্টারদের বিরোধিতা করছে। সার্সেইয়ের পরিস্থিতি তাই খুব বেশি সুবিধার ছিল না। বাধ্য হয়েই তাকে টাইরেল ব্যানারম্যানদের ডাকতে হয়েছে। যদিও ভাবনার বিষয় যে, ডর্নের মার্টেল ব্যানারম্যানদের কেন সে ডাকে নি! ইলারিয়া স্যান্ড ও স্যান্ড স্নেকদের কর্তৃত্ব তাদের সহজে মেনে নেয়ার কথা না। তারা ডোরান মার্টেলকে মেরে ফেলার পরে মার্টেল ব্যানারম্যানরা সার্সেইয়ের কথাগুলো শুনলে নিশ্চয়ই বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্থন দিতো।
টাইরেল ব্যানারম্যানদের মধ্যে স্যাম টার্লির বাবা র্যান্ডিল টার্লি বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ডেনেরিসের ডর্ন আর গ্রেজয় বাহিনী ধ্বংস হয়েছে, সুতরাং ওলেনা টাইরেলের সৈন্য ছাড়া স্থলপথে কিংস ল্যান্ডিংয়ে আক্রমণের কোন উপায় নেই। র্যান্ডিল টার্লি কথাচ্ছলে জেইমিকে সম্ভবত সেই আর্মির কথাই বললো। সার্সেই আর জেইমি হয়তো আশায় আছে র্যান্ডিল টার্লি টাইরেলদের আনুগত্য ছেড়ে তাদের পক্ষে যোগ দিবে। তবে সে সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ মনে হচ্ছে। র্যান্ডিল স্যামের সাথে যতই দুর্ব্যবহার করুক না কেন, নীতি বা আদর্শের দিক থেকে তার কোন খামতি নেই। যে কোন হাউজের ব্যানারম্যানদের মূল আনুগত্য খুব সহজে বদলায় না। এজন্যেই তারা হাজার বছর ধরে রাজ্যগুলোতে টিকে থাকতে পারছে। যে কারণে আগের পর্বে জন কারস্টার্ক ও উম্বারদের মাফ করে দিয়েছিল, কারণ তাদেরও হাজার বছরের আনুগত্যের ইতিহাস দুয়েকজনের বিশ্বাসঘাতকতায় উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর টার্লি হাউজের হর্ন হিল সার্সেই বা জেইমির নাগালেরও বাইরে।
ওল্ডটাউন
অবস্থাদৃশ্যে মনে হচ্ছে স্যাম ওল্ডটাউনে এসে যা শেখার তা নিজে নিজে চুরি করেই শিখবে। গত পর্বে পাঠাগারের সংরক্ষিত অংশ থেকে বই চুরি করে করে জানতে পারলো যে ড্রাগনস্টোন দ্বীপে ড্রাগনগ্লাসের পাহাড় আছে। এই পর্বে জোরাহ মরমন্টের গ্রেস্কেল রোগের চিকিৎসার জন্যও রাতের আঁধারে লুকিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্যার জোরাহ মরমন্টের অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। আর্চমেয়স্টার এব্রোস বললেনই যে মাত্র মাসছয়েক তার বোধবুদ্ধি থাকবে। তারপর সে পুরোপুরি উন্মাদ ‘স্টোনম্যান’-এ পরিণত হবে। আত্মহত্যার পন্থা বাতলে এব্রোস হাত ধুয়ে ফেললেন। জোরাহ যে লর্ড কম্যান্ডার জেওর মরমন্টের ছেলে এটা জানতে পেরে স্যাম তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করে। জেওর মরমন্ট নাইটস ওয়াচের লর্ড কম্যান্ডার ছিলেন। নাইটস ওয়াচ যখন ওয়ালের উত্তরে ফিস্ট অফ দ্যা ফার্স্ট মেন-এ গিয়ে হোয়াইট ওয়াকারদের আক্রমণের শিকার হয়, তখন জেওর মরমন্ট বলতে গেলে একাই অনেককে বাঁচিয়েছিলেন। সেসময় স্যামকে তিনি বলেছিলেন, “You are not dying today, Sam.” সেই একই উক্তি আজ স্যাম তার ছেলে জোরাহকে বললো। গেম অফ থ্রোনসের এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো বেশ চমৎকার। গ্রেস্কেল দেখতে যতটা ভয়াবহ, তার চিকিৎসা পদ্ধতি ততটাই ঘিনঘিনে। গত পর্বে স্যামের দৈনন্দিন রুটিনের গা-গুলানো ভাব এবারের চামড়া-ছাড়ানো দৃশ্যে ছাড়িয়ে গেল। আর যেভাবে এই দৃশ্য থেকে রিভারল্যান্ডসের এক সরাইখানায় খাবার খাওয়ার দৃশ্যে হুট করে চলে গেল সেটা অনেকদিন মনে থাকার মতো।
রিভারল্যান্ডস
রিভারল্যান্ডস এলো যখন, তখন আরিয়ার ঘটনাটুকুও জানা গেল। এই সেই সরাইখানা যেখানে আরিয়া আর গেন্ড্রি কয়েকবছর আগে হট পাইকে রেখে গিয়েছিল। এখন হট পাইয়ের সাথে দেখা হলো। মনে হচ্ছে এই কয়েকবছরে হট পাই আরো মোটা হয়েছে। এখানে আরিয়া জানতে পারলো যে জন স্নো কিং ইন দ্যা নর্থ। শুধু এই খবরটাই তার ভেতরে পুরনো আরিয়ার অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট। ভাই-বোনদের মধ্যে জনের সাথে আরিয়ার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য ছিল। সরাই থেকে বেরিয়ে তাই দক্ষিণের বদলে উত্তরে রওনা দিল আরিয়া। পরের দৃশ্যটি সম্ভবত কয়েকদিন পরের। আরিয়ার চারপাশে বরফাচ্ছাদিত বন, মাঝখানে ছোট একটা আগুন জ্বালিয়ে সে নিজেকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করেই চারপাশে বুনো নেকড়েরা ঘিরে ধরলো তাকে, আর তাদের পেছন থেকে উঠে এল প্রকাণ্ড ডায়ার-উল্ফ নাইমেরিয়া। সাত বছর আগে নাইমেরিয়াকে প্রাণ বাঁচাতে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল আরিয়া। কারণ কিং রবার্টের সৈন্যরা জফ্রিকে কামড় দেয়ার অভিযোগে নাইমেরিয়াকে ধরার চেষ্টা করছিল। সেদিনের পর থেকে নাইমেরিয়াকে আরিয়া আর কখনই দেখে নি। আজ এতদিন পরে তারা মুখোমুখি। মুহূর্তের মধ্যে দু’জনেরই চেহারার রেখাগুলো বদলে কোমল হয়ে এলো। আরিয়া হাতের তলোয়ারটি নামিয়ে রাখলো।
নাইমেরিয়া আরিয়ার এই ডাকে সাড়া দিল না। নীরবে পিছু ফিরে নেকড়ের পাল নিয়ে চলে গেল। সেইদিনের পরে আরিয়া আর নাইমেরিয়ার জীবন দুই পথে চলে গেছে। একজনের উত্থান-পতনের টালমাটাল সংগ্রামের কথা অন্যজনে জানতে পারে নি। আমরা যেমন শুধু আরিয়ার সংগ্রাম দেখেছি, তার কষ্ট, তার সব-হারানোর দুঃখ দেখেছি। অথচ এসময়ে নাইমেরিয়াও একা একা গহীন জঙ্গলে বড় হয়েছে। তার জীবন আমাদের অগোচরে ছিল। অনেক দিনের পুরনো বন্ধুর সাথে অনেক বছর পর দেখা হলে আমরাও এমন বোধ করি বোধহয়। ওর জীবনের গল্পগুলো আমার জানার হয় না, যেমন ওর জানা হয় না আমার জীবনের গল্পের কথা। পরষ্পর প্রায় অপরিচিত দুজন, অথচ একসময়ে হয়তো ছিল আত্মার টান। দৃশ্যটি দেখে কেন যেন সেসব কথাই মনে হচ্ছিল।
এটি মূলত সংলাপনির্ভর একটা পর্ব ছিল। আগামী কয়েক পর্বের ঘটনাবলীর পটভূমি গড়তে এরকম একটি পর্বের দরকার ছিল। তারপরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক থিমগুলোকে পাশাপাশি উপস্থাপনের কাজটি দারুণভাবে করা হয়েছে।
আরো পড়তে পারেন –
গেম অফ থ্রোনসঃ ৭.০১: রিভিউ – Game of Thrones Season 7 Episode 1 Review