“The Targaryens have always danced too close to madness. King Jaehaerys once told me that madness and greatness are two sides of the same coin. Every time a Targaryen is born, the gods toss a coin in the air and the world holds its breath to see how it will land.”
– Ser Barristan Selmy (A Storm of Swords)
উন্মাদ। ভয়ঙ্কর। নিষ্ঠুর। কুখ্যাত। রাজা ২য় এয়রিস টারগারিয়েন। যে রাজার সাথে প্রায় তিনশ বছর টারগারিয়েন সাম্রাজ্যের দোর্দণ্ড শাসনামল শেষ হয়ে গিয়েছিল। অথচ শুরুটা এমন ছিল না। এয়রিস যখন মাত্র আঠারো বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিল তখন বড় বড় ত্রিকালদর্শী গণকেরাও কেউ ভাবে নি ধীরে ধীরে সে এতোটা উন্মাদ হয়ে উঠবে। এয়রিস তখন সদ্য ফিরেছে ‘নাইনপেনি কিংদের যুদ্ধ’ থেকে। তার বাবা রাজা ২য় জ্যাহ্যারিসের নেতৃত্বে এয়রিস লড়েছিল বীরের মতোই। সেসব যুদ্ধে তার পাশে ছিল ছোটবেলার বন্ধু টাইউইন ল্যানিস্টার আর ফুপাতো ভাই স্টেফন ব্যারাথিয়ন। যুদ্ধশেষে হুট করেই মারা গেলেন জ্যাহ্যারিস। আর সিংহাসন পেল যুবক এয়রিস। এয়রিস যে খুব তীক্ষ্ণবুদ্ধির অধিকারী ছিল এমন না, তবে তার চলন-বলনে রাজপুত্রসুলভ আকর্ষণ ছিল পুরোমাত্রায়। আমুদে স্বভাবের এয়রিস রাজদরবারেও সমাদৃত ছিল। ২৬২ সালে (এয়গন টারগারিয়েনের ওয়েস্টেরোস জয় করার ২৬২ বছর পর) এয়রিস রাজা হল। একই বছরে রাজধানী কিংস ল্যান্ডিং থেকে দক্ষিণে ‘স্টর্মস এন্ড’ প্রাসাদে স্টেফনের ঘরে জন্ম নিল কালো চুলের এক শিশু। স্টেফন তার নাম রাখল রবার্ট। আর রাজধানী থেকে অনেক উত্তরে উইন্টারফেল প্রাসাদে লর্ড রিকার্ড স্টার্কের ঘরে জন্মাল ব্র্যান্ডন। পরের বছরই রিকার্ডের দ্বিতীয় ছেলে এডার্ডের জন্ম হল। তখন কে জানতো বিশ বছর পর এই তিন শিশুই ক্রমে উন্মাদ ও খুনে হয়ে ওঠা এয়রিসের পতনের কারণ হবে!
এয়রিস রাজপুত্র থাকতেই তার স্ত্রী (এবং বোন) রায়েলা জন্ম দিয়েছিল রেয়গার টারগারিয়েনের। তাই রাজা এয়রিসের উত্তরসূরী রেয়গার জ্ঞান হবার পর থেকেই রাজপুত্র ও পরবর্তী রাজা হিসেবে বেড়ে উঠছিল। রাজা হিসেবে এয়রিসের উচ্চাশা আর উৎসাহের কোন কমতি ছিল না। সে ভেবেছিল কালে কালে তার কীর্তি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। লোকে তাকে ‘এয়রিস দ্যা ওয়াইজ’ বা ‘এয়রিস দ্যা গ্রেট’ নামে ডাকবে। সে তার বাবার রেখে যাওয়া দরবারের বুড়ো বুড়ো উপদেষ্টাদের প্রায় সকলকেই সরিয়ে দিল। তার বাবার ‘হ্যান্ড’ ছিল বৃদ্ধ ও অতি-সাবধানী এডগার স্লোন। তাকে সরিয়ে এয়রিস হ্যান্ড বানাল বন্ধু টাইউইনকে। টাইউইনের বয়স তখন মাত্র বিশ বছর – ওয়েস্টেরোসের ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী হ্যান্ড। বয়স কম হলে কী হবে, টাইউইন এই বিশ বছরেই ওয়েস্টারল্যান্ডে তার নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিল। টাইউইনের বাবা টাইটোস ল্যানিস্টার ক্যাস্টারলি রকের লর্ড ছিলেন বটে, কিন্তু নরমসরম দুর্বল নেতৃত্বের চরিত্র ছিল তার। প্রায়ই ল্যানিস্টার ব্যানারম্যান হাউজগুলো তার নির্দেশ অমান্য করতো, তিনি তাদেরকে ঠিকভাবে শাসন করতে পারছিলেন না। নাইনপেনি কিংদের যুদ্ধের এক বছর পর টারবেক আর রেইন হাউজদ্বয়ের লর্ডেরা সরাসরি টাইটোসের বিরোধিতা করে বসে। তারা অর্থ ও ক্ষমতায় বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, তাই এমন নাজুক লর্ডকে সরিয়ে তারাই পশ্চিমের ওয়ার্ডেন হতে চাইল। টাইউইনের সহ্যের সীমাও পার হয়ে যাচ্ছিল। বারবার নিজের বাবাকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে কারই বা ভাল লাগে। বাবার পাশাপাশি ল্যানিস্টার পরিবার হাজার বছরের সম্মান ও সমীহা হারাচ্ছে, এটা টাইউইন কোনভাবেই হতে দিবে না। সে যেভাবে টারবেক আর রেইন হাউজকে দমিয়েছিল, সেটা রীতিমত ভীতিকর। শুধু বিদ্রোহী লর্ডদেরই সে মারে নি, এই দুই হাউজের নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাইকে মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এখানেই শেষ না, রেইনদের প্রাসাদের দেয়ালে পুরুষদের কাটা মাথাগুলো বর্শায় বিঁধিয়ে রেখেছিল যেন পুরো ওয়েস্টারল্যান্ডের সব ব্যানারম্যানরা দেখতে ও জানতে পারে টাইউইন ল্যানিস্টারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিণতি কী হয়। রেইনস অফ ক্যাস্টামেয়ার গানেরও জন্ম এসময়ই।
“Every once in a very long while, Lord Tywin Lannister would actually threaten to smile; he never did, but the threat alone was terrible to behold.”
– Tyrion Lannister (A Storm of Swords)
পদ্ধতি যাই হোক না কেন, মাত্র উনিশ বছর বয়সেই টাইউইন ওয়েস্টারল্যান্ডে শৃঙ্খলা আর আনুগত্য ফিরিয়ে আনল। পরের বছর পরম বন্ধু এয়রিসও রাজা হল, আর সে হয়ে গেল রাজার ডান হাত। এয়রিস যেমন ছিল স্বভাবে উচ্ছ্বল, আমুদে, টাইউইন তেমনি ছিল গম্ভীর, কঠোর ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির। এয়রিসের দরবারে আনন্দ-উদযাপন লেগেই থাকতো আর তার ছোঁক ছোঁকের স্বভাবটাও চাপা ছিল না। রাজার দরবারে রাতের পানোল্লাস দেখে সেটাকে হেরেমখানা বলেই ভ্রম হতো। সারা রাজ্যের আনাচে-কানাচে থেকে সম্ভ্রান্ত বংশীয় কুমারীদের মেলা বসল রাজধানীতে। আর তার ছিল বিশাল বিশাল পরিকল্পনা। হঠাৎ একদিন তার ইচ্ছা হল, ঠিক করল ওয়ালের আরো একশ মাইল উত্তরে একইরকম আরেকটা ওয়াল বানাবে। টাইউইনকে বলল টাকাপয়সা আর সরঞ্জাম করতে। কিংস ল্যান্ডিংয়ের ঘিঞ্জি পরিবেশ আর নালা-নর্দমার দুর্গন্ধ, তাই সে ঠিক করল এর পাশেই শ্বেতমার্বেলের এক নয়নাভিরাম নতুন নগর গড়ে তুলবে যেখানে কোন ময়লা আবর্জনা থাকবে না। তার বাবা ব্র্যাভোসের আয়রন ব্যাংকের কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আয়রন ব্যাংক সেই হিসাব চুকাতে এলে তার মেজাজ বিগড়ে গেল। টাইউইনকে নির্দেশ দিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নৌবহর গড়ে তোল, আমি ব্র্যাভোস গিয়ে টাইটানদের চৌদ্দটা বাজাবো। স্বস্তির ব্যাপার হল তার এসব পরিকল্পনা আর উৎসাহ ক্ষণজন্মা হতো। হয়তো মাসখানেক পরই সে ভুলে গিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। এয়রিসের স্বভাবটাই এমন ছিল, খুব বেশিদিন কোন কাজে বা কোন নারীতে তার মন বসতো না। টাইউইন নিজের বন্ধুর হালচাল ভালই বুঝত, তাই এসবে পাত্তা না দিয়ে সে নিজের কাজ করতে থাকল। রাজার এহেন খামখেয়ালিপনাতেও সাম্রাজ্যের কোন ক্ষতি হল না। টাইউইনের দক্ষ পরিচালনায় ধীরে ধীরে পুরো রাজ্যে রাজার হ্যান্ডের সুনাম ছড়িয়ে গেল। লোকে বলত সিংহাসনে এয়রিস বসে আর রাজ্য চালায় টাইউইন। আয়রন ব্যাংকের ঘটনাটাই ধরুন। কর্জ মেটাতে টাইউইন নিজের কোষাগার থেকে স্বর্ণ এনে দিয়ে এয়রিস তথা রাজার মান বাঁচল। কিংস ল্যান্ডিং, ল্যানিসপোর্ট, আর ওল্ডটাউনের সমুদ্রবন্দরে যেসব ব্যবসায়ীরা আসা যাওয়া করত, তাদের ওপর থেকে উচ্চহারে খাজনা নেয়া হত। টাইউইন এই খাজনার হার কমিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গেল। আগে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন লর্ডরা যেন খুব বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। টাইউইন ল্যানিস্টার ধীরে ধীরে সেসব বিধিনিষেধ তুলে দিল। শান্তিকালীন ‘হ্যান্ড’ হিসেবে পুরো সাম্রাজ্যকে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা আর উন্নতির স্বাদ পাইয়ে দিল সে। তার ‘ছদ্ম-রাজত্বে’ একদিকে যেমন অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হত তেমনি অন্যদিকে রাস্তাঘাট মেরামত করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আর পালা-পার্বণে মেলার আয়োজনও করা হত।
এতকিছুর করেও টাইউইন লর্ড আর ব্যানারম্যানদের মাঝে জনপ্রিয় হতে পারল না। তারা তাকে ভয় পেত, সমীহ করত, কোন নির্দেশ দিলে অক্ষরে অক্ষরে পালন করত বটে, কিন্তু মনে মনে ঠিকই অপছন্দ করত। এয়রিস ছাড়া টাইউইনের তেমন কোন বন্ধু বা সতীর্থ ছিল না। রাজদরবারে তাকে ঘিরে একটা ভয়ভয় পরিবেশ বিরাজ করত, কারণ গাফিলতির শাস্তিতে সে বড়ই কড়া। হ্যান্ড হবার একবছর পর ২৬৩ সালে টাইউইন তার চাচাতো বোন জোয়ানা ল্যানিস্টারকে বিয়ে করল। অসম্ভব সুন্দরী এই মেয়েটি ২৫৯ সালে কিংস ল্যান্ডিংয়ে এসেছিল, জ্যাহ্যারিসের অভিষেকের সময়। অভিষেকের পর টাইউইনের বাবার সুপারিশে তাকে রাজকন্যা রায়েলার (পরবর্তীতে রাণী) সহচরী বানিয়ে রাজপ্রাসাদেই রাখা হয়। টাইউইন তখন নাইট, ছোটবেলা থেকেই জোয়ানাকে দূর থেকে পছন্দ করে আসছে। তাদের বিয়েটাও বেশ ঘটা করে হয়েছিল। টাইউইন বাইরে গম্ভীর স্বভাবের হলেও এই জোয়ানার আশেপাশে থাকলে তাকে দেখে অন্য মানুষ মনে হতো। রাজপ্রাসাদের মেয়স্টার পাইসেলের ভাষ্যে, “একমাত্র লেডি জোয়ানাই বর্মের নিচে লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে চিনতে পেরেছিল। তার সকল হাসি লেডি জোয়ানার জন্য। আমি নিজেই দেখেছি লেডি জোয়ানার কথায় তিনি সবার সামনেই জোরে হেসে দিয়েছেন, তাও একবার না, তিন তিন বার!”
তাদের এই উষ্ণ সম্পর্কের মধ্যে বাগড়া হিসেবে আবির্ভূত হল এয়রিস। রাজপুত্র থাকার সময় থেকেই জোয়ানার প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা অনেকেরই নজরে পড়েছিল। এমন একটা গুজবও চালু ছিল যে তার বাবা জ্যাহ্যারিসের অভিষেকের সময় জোয়ানার সাথে সে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিল। তবে এটা স্রেফ গুজব। কিছুদিন পরপর এয়রিসের উদ্ভট কর্মকাণ্ডে যেটা চাপা পড়তে পড়তে আবার উস্কে উঠত। টাইউইন আর জোয়ানার বিয়ের সময়ের কথাই ধরা যাক। অনেক আগে ‘bedding ceremony’ বলে একটি অদ্ভুত প্রথা চালু ছিল, যেখানে কোন প্রজা বিয়ে করলে বাসর রাতে রাজা কনের সাথে রাত কাটাত। এয়রিসদের সময় এই প্রথা কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছিল, রাজা নিজে অনুমতি দিত যে তার আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ নিয়ে নববিবাহিতরাই একসাথে রাত কাটাক। টাইউইন-জোয়ানার বিয়ের পর এয়রিস আশীর্বাদ দেয়ার বদলে রীতিমত বাসর ঘর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তার এই আচরণে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল জোয়ানা, ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়েছিল তার স্ত্রী রায়েলা, আর বিব্রত হয়েছিল টাইউইন যদিও তার পাথরের মতো নির্বিকার চেহারা দেখে কিছুই বোঝা যায় নি। ব্যাপারটা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই এয়রিসের সুমতি হয়েছিল বলে রক্ষা। রায়েলা এর পরপরই জোয়ানাকে তার সহচরীদের দল থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিল।
এয়রিস আর রায়েলার বিয়েটা অত সুখের ছিল না। এয়রিসের নারীপ্রীতির কথা রায়েলা জানত, তারপরেও মেনে নিয়েছিল কারণ এসব তার চোখের সামনে ঘটতো না। জোয়ানার ঘটনাতে তাই সে প্রথমবারের মতো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত নিচুঘরের কোন কুমারী মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করা এক ব্যাপার, আর বন্ধুর নববিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি এমন অশালীন আগ্রহ দেখানো আরেক ব্যাপার। সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে গেল যখন সে বছর আর তার পরের বছর রায়েলা মৃত কন্যাসন্তান জন্ম দিল। ২৬৯ সালে এক রাজপুত্রের জন্ম দিয়েছিল, সেও ছ’মাসের মধ্যেই মারা গেল। এর পরে আরো চার বছরে চার চারটি মৃতজাত শিশু প্রসব করল রায়েলা। এতগুলো দুর্ঘটনার শোক থেকেই কিনা জানি না, এয়রিস ক্রমেই রায়েলার প্রতি ক্রুদ্ধ ও সন্দিহান হয়ে উঠল। নিশ্চয়ই রায়েলার মধ্যেই কোন সমস্যা আছে। বারবার এভাবে মৃত শিশু জন্মাবে কেন? নিশ্চয়ই রায়েলা লুকিয়ে লুকিয়ে পরকীয়া করছে, আর দেবতারাই সেইসব সন্তানকে জন্মের আগে বা সাথে সাথেই মেরে ফেলছে! এটাই হয়ত এয়রিসের উন্মাদ হয়ে ওঠার প্রথম লক্ষণ ছিল। রাজা হিসেবে প্রায় দশ বছর হয়েছে তখন। এতদিনের খামখেয়ালিপনার স্বভাব এখন ক্রূর সন্দিগ্ধ হয়ে উঠছে। এসবের মাঝেই ২৬৬ সালে লেডি জোয়ানা দুইটি ফুটফুটে জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছে। টাইউইন তাদের নাম রাখল জেইমি আর সার্সেই। ধবধবে ফর্সা আর ঝকঝকে স্বর্ণকেশী দুই অপরূপ শিশু। এয়রিস কি এই খবর শুনে একটু হিংসা করবে না? খবর শোনার সাথে সাথে অসূয়া-জরজর এয়রিস বলে বসল, “মনে হচ্ছে আমি ভুল নারীকে বিয়ে করেছি।” এর এক বছর পর টাইউইনের বাবার দুর্বল হৃদয় আর পরিশ্রম করতে আপত্তি জানাল। টাইউইন অবশেষে ক্যাস্টারলি রকের লর্ড আর ওয়ার্ডেন অফ ওয়েস্টারল্যান্ড হয়ে গেল। বাবার মৃত্যুর শ্রাদ্ধ করতে টাইউইন রাজধানী থেকে ক্যাস্টারলি রকে আসল। তার সাথে সঙ্গে এল রাজা এয়রিস আর পেছন পেছন দরবারের অর্ধেকেরও বেশি সভাসদ। নিজের আট বছর বয়সী ছেলে রেয়গারকে সাথে নিলেও অন্তঃসত্ত্বা রায়েলাকে কিংস ল্যান্ডিংয়েই রেখে গেল এয়রিস। রাজা আর রাজদরবার যেখানে, রাজকার্যও সেখানেই। এরপর ফিরছি ফিরব করে এয়রিস সেখানেই কাটিয়ে দিল প্রায় এক বছর।
২৬৮ সালে যতদিনে এয়রিস আর টাইউইনসহ সকলে কিংস ল্যান্ডিংয়ে ফিরে এল ততদিনে এদের মাঝের ঠোকাঠুকি লোকচক্ষুর আড়াল থেকে সামনে চলে এসেছে। ছোটবেলার এত হৃদ্যতা আর বন্ধুত্ব মাত্র ছয় বছরের রাজকার্যের চাপে বিবর্ণ হয়ে গেল। রইল শুধু মুখোশ – উপরে উপরে সৌজন্যতার অভিনয়। আগে রাজকার্যের প্রায় সব বিষয়ে টাইউইনের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তে এয়রিস সম্মতি জানাত। এখন প্রকাশ্যেই মতবিরোধের সূচনা হল। টাইউইনের প্রায় সব সুপারিশেই এয়রিস উল্টো করতে থাকল। ব্ল্যাকউড আর ব্র্যাকেন হাউজের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলা হয়েছে। টাইউইন সব শুনে সিদ্ধান্ত দিল ব্ল্যাকউডের পক্ষে। আর সেটা এয়রিস উল্টে ব্র্যাকেনের পক্ষে রায় দিয়ে দিল। টাইউইন বারবার নিষেধ করার পরেও এয়রিস সব সমুদ্রবন্দরের খাজনা দুইগুণ তিনগুণ করে দিল। তারপর যখন ব্যবসায়ীদের একটা ছোট দল রাজদরবারে অনুনয় বিনয় করে এসে পড়ল, তখন এয়রিস সবার সামনেই পুরো দোষ টাইউইনকে দিল। বলল,
“Lord Tywin shits gold, but of late he has been constipated and had to find some other way to fill our coffers.”
আরো কিছুক্ষণ কাকুতি-মিনতির পর সে নিজেই সব খাজনা আগের সমান করে দিল। ব্যবসায়ীরা রাজা মহান রাজা ধন্য বলতে বলতে খুশি মনে চলে গেল, আর এই ঘটনার সব দায় গিয়ে পড়ল টাইউইনের উপর।
এতদিনে এয়রিসের কানেও কানকথা গিয়ে পৌঁছেছে যে সিংহাসনে নাম-কা-ওয়াস্তে সে বসে আর রাজ্যের আসল রাজা টাইউইন। চাপা ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় প্রতিহিংসা, আর সে রিপুতে অন্ধ এয়রিস এরপর থেকে উঠতে বসতে টাইউইনকে অপমান করতে শুরু করল। সভায় যখনই নতুন কাউকে কোন পদ দেয়া হবে, তখনই এয়রিস সচেতনভাবে টাইউইনের সুপারিশের বাইরে যেতে থাকল। কারণ তার সন্দেহ ছিল টাইউইন ধীরে ধীরে রাজসভায় নিজের চর দিয়ে ভরে ফেলবে। অচিরেই রাজদরবার অযোগ্য লোকে ভরে উঠল, যারা সবাই জানত যে টাইউইন তাদের বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছিল। সুতরাং পরোক্ষভাবে হলেও টাইউইন ল্যানিস্টারের জন্য দরবারে টিকে থাকা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছিল। এর মাঝেই চলে এল রাজা এয়রিসের দশম বার্ষিকী। ২৭২ সালে এই উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত হলো এক বিশাল টুর্নামেন্টের। লেডি জোয়ানা তার দুই সন্তান ছয় বছর বয়সী জেইমি আর সার্সেইকে নিয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ে চলে এল। রাজদরবারে জেইমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজার সামনে উপস্থাপন করার জন্য একটা ছোট অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। লেডি জোয়ানার সাথে এত বছর পর আবার দেখা। এয়রিসের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। জেইমির উপস্থাপনার শেষে সবার সামনে এয়রিস জোয়ানাকে জিজ্ঞাসা করল, এই দুই বাচ্চাকে স্তন্যপান করাতে করাতে তোমার স্তন সুডৌলতা হারায়নি তো? দরবার জুড়ে হাসির হুল্লোড় পড়ে গেল। টাইউইন ল্যানিস্টারের দৃঢ় চোয়াল, চোখ ভাবলেশহীন। লজ্জিত ও অপমানিত লেডি জোয়ানা দরবার থেকে প্রস্থান নিল। পরদিন টাইউইন নিজের পদত্যাগপত্র পেশ করল এয়রিসের কাছে, কিন্তু এয়রিস সেটা পাত্তাই দিল না। কোন এক অদ্ভুত কারণে এত হিংসা, এত সন্দেহের পরও এয়রিস কখনই চায়নি টাইউইন হ্যান্ডের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াক। রাজদরবারে প্রায়ই টাইউইনকে কটুকাটব্য করত সে, প্রতিটি কাজে প্রতিটি সিদ্ধান্তে খামখেয়ালীপনার চূড়ান্ত করত, তারপরও টাইউইন তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন কথা বলেনি। পরের বছর লেডি জোয়ানা আরেকটি সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রসবকক্ষেই মারা গেল। টাইউইনের জন্য এটা ছিল ভয়ঙ্কর এক ধাক্কা। বাইরে কিছু না দেখালেও তার ভেতরের কোমল ভালবাসাময় অংশটুকুর দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি তার আপনজনেরাও তাকে দেখেছে প্রবল প্রতাপশালী, রাগী কিন্তু শৃঙ্খলাপরায়ণ, আবেগহীন টাইউইন হিসেবে। যে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে জোয়ানা মারা গেল তার নাম টিরিয়ন। আকারে খর্বাকৃতি, চেহারা কুৎসিত, চোখ দুটো অসমান। লোকমুখে তাকে বলা হতো টাইউইন ল্যানিস্টারের শনি। অনেকে এটাও বলে যে জন্মের সময় তার নাকি একটা লেজও ছিল, যেটা টাইউইনের নির্দেশে কেটে ফেলা হয়েছিল। এমন প্রবল শোকের মাঝে টাইউইন জানতে পারল জোয়ানার মৃত্যুর খবর এয়রিসকে দেয়া হয়েছে। শুনে এয়রিস বলেছে, “দেবতারাও এমন অহঙ্কারীকে মেনে নেয় না। তার হাত থেকে তারা সুন্দর একটা ফুল কেড়ে নিয়েছে, আর বিনিময়ে দিয়েছে ওই খর্বাকৃতির বামন। এতে যদি সে একটু বিনয় শেখে।”
হয়তো জোয়ানার মৃত্যুই এয়রিস আর টাইউইনের মাঝে যৎকিঞ্চিৎ যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তা পুরোপুরি শেষ করে দিল। এরপরও টাইউইন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। শেষকৃত্য ও শোক পালন করে যথারীতি কাজে ফিরে এসেছে। আর এয়রিসও যথারীতি তাকে আগের মতই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর অপমানের ফুলঝুরি দিয়ে কৃতার্থ করেছে। টাইউইনের এই সর্বংসহা মূর্তি এয়রিস আরো বেশি সন্দেহপ্রবণ করে তোলে। গুপ্তচর দিয়ে রাজপ্রাসাদের চারিদিক ভরে ফেলে সে। রাজ্যের কোথাও কোন ষড়যন্ত্র হলে বা কেউ রাজাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বললে যে কেউ দরবারে নালিশ পাঠিয়ে দিতে পারে। বিনিময়ে নালিশকারী পাবে পুরস্কার আর অপরাধী খোয়াবে মাথা। টাইউইনের ব্যক্তিগত রক্ষীদের ক্যাপ্টেন ছিল ইলিন পেইন নামের এই নাইট। কে কোথায় শুনেছে ইলিন পেইন তার কর্তা টাইউইন আর এয়রিসকে নিয়ে সেই বহুলপ্রচলিত কথাটি বলে ভাব নিচ্ছিল। এই নালিশ হওয়ামাত্রই ইলিন পেইনকে ধরে এনে এয়রিস তার জিহ্বা কেটে দেয়ার নির্দেশ দিল। সন্দেহবাতিক প্রবণতা বাড়তে বাড়তে এয়রিসের মানসিক বৈকল্য দেখা দিল। ২৭৬ সালে অবশেষে রাণী রায়েলা একটি ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম দিল। তার নাম রাখা হল ভাইসেরিস। রাজপুত্র রেয়গার তখন সতেরো বছর বয়সী। সবাই ভেবেছিল নতুন সুস্থসবল রাজপুত্র জন্মেছে, এবারে হয়তো রাজা একটু হাসিখুশি হবে আগের মত। কীসের কী! মনে হয় এবার রাজা আরো বেশি সন্দেহবাতিকতায় ভুগতে শুরু করল। নতুন শিশুর যেন বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয় তার জন্য এয়রিস হেন কিছু নেই যা করেনি। এমন অবস্থা দাঁড়াল যে কিংসগার্ডের নাইটদের দিয়ে ভাইসেরিসের কক্ষ দিনরাত পাহারা চলছে। রাজার অনুমতি ছাড়া কেউই সে ঘরে ঢুকতে পারবে না, এমনকি রাণী রায়েলাও না। তার প্রতিটি খাবার আগে পরীক্ষককে খেয়ে দেখতে হত যেন কোন বিষ মেশানো না থাকে। নতুন শিশুর জন্ম উপলক্ষ্যে সাত রাজ্য থেকে অজস্র লর্ডরা অজস্র খেলনা আর উপহার পাঠিয়েছিল। রাজা এসমস্ত প্রাসাদের এক উঠানে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিতে বলল। কে জানে, হয়তো কোন খেলনার গায়ে বিষ মেশানো থাকবে। এমন অবস্থায় টাইউইন রাজার সাথে সম্পর্ক মেরামত করার একটা শেষ চেষ্টা করল। ভাইসেরিসের জন্ম উপলক্ষ্যে ক্যাস্টারলি রকে এক বিশাল টুর্নামেন্টের আয়োজন করল। এয়রিস স্বভাবসুলভ সন্দেহের বশে প্রথমে যেতে চাইল না, পরে টাইউইনের জোরাজুরিতে নিমরাজি হয়ে গেল। সাথে শুধু রেয়গার। রাণী রায়েলা আর শিশু ভাইসেরিস কিংস ল্যান্ডিংয়েই থাকল। রেয়গার তখন সদ্যই নাইট উপাধি পেয়েছে। সেই জোশেই কিনা সে একে একে বাঘা বাঘা নাইটদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন রাউন্ডে পৌঁছে গেল। যদিও শেষ পর্যন্ত স্যার আর্থার ডেইনের সাথে মোকাবিলায় সে হেরে যায়। তবুও মাত্র সতের বছর বয়সে এতটা অর্জন একেবারে কম না। রাজার উল্লাস দেখে আর দেখে কে! টাইউইন ভাবল এখন মেজাজ-মর্জি ভাল আছে। কিছু চাইলে এয়রিস না করবে না। রেয়গারের বিয়ের জন্য পাত্রী হিসেবে সে নিজের মেয়ে সার্সেইয়ের নাম প্রস্তাব করল। মেজাজ ভাল থাকলেও সেটা এয়রিস বলে কথা। তাচ্ছিল্যের সাথে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে এয়রিস বলল, তুমি হলে রাজ-চাকর। খুব গুরুত্বপূর্ণ আর কর্মঠ চাকর, কিন্তু চাকর তো। চাকরের মেয়ের সাথে রাজপুত্রদের বিয়ে হয় না। টাইউইন তাতেও দমে না গিয়ে বলল, ঠিক আছে। অন্তত আমার ছেলে জেইমিকে রেয়গারের স্কয়ার করে প্রশিক্ষণ নেয়ার অনুমতি দিন। এয়রিস সেই প্রস্তাবেও সায় দিল না।
এতদিনে এক এয়রিস ছাড়া প্রায় সবাই বুঝে গিয়েছে যে রাজা স্বাভাবিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারছে না। এই অবস্থা থেকে যে ঘটনায় এয়রিস পুরোপুরি বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হল সে ঘটনাটি ঘটল এর ঠিক এক বছর পর, ২৭৭ সালে। কিংস ল্যান্ডিং থেকে উত্তরে ডাস্কেনডেল বলে একটি প্রাচীন বন্দরনগরী আছে। হাজার বছর ধরেই এটি ব্ল্যাকওয়াটার বে’তে সবচেয়ে বড় বন্দর ছিল, যদিও সম্প্রতি কিংস ল্যান্ডিংয়ের প্রতিপত্তির কারণে ধীরে ধীরে তার জমজমাট ব্যবসা কমে এসেছিল। ডাস্কেনডেলের লর্ড হাউজ ডার্কলিনের তরুণ লর্ড ডেনিস চাচ্ছিল তার বন্দরনগরীটাকে আবার পুরনো গৌরবে ফিরিয়ে নেয়া যায় কিনা। খাজনা শিথিলের আবেদন করে একটা রাজকীয় সনদ চেয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল সে। এরকম সনদ একেবারেই দেয়া হয় না এমন না। ডর্ন এরকম একটা সনদ পেয়েছিল অনেক বছর আগেই। ডেনিস ডার্কলিনের স্ত্রী এসোসের মির শহরের বাসিন্দা, সেও তার স্বামীকে বলেছিল যে এসোসে এরকম সনদ অনেক জায়গায়ই চালু আছে। টাইউইন ব্যবসা ভাল বোঝে, তাই এই আবেদন সরাসরি নাকচ করে দিল। কিংস ল্যান্ডিংয়ের এত কাছের আরেকটা বন্দরকে এমন আলগা সুবিধা সে কিছুতেই দিবে না। এর পরে অন্যান্য বন্দরগুলোও একই সনদ চেয়ে বসতে পারে – এটাই একটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার। আবেদন খারিজ হয়েছে জানতে পেরে ডেনিস ডার্কলিন রীতিমত ক্ষেপে গেল। এর পরে ডেনিস যা করল সেটার পেছনে মূল কারণ কী তা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে। কেউ বলে ডেনিসের বয়স কম ছিল, তাই সে ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারেনি। কেউ বলে তার বই কানপড়া দিয়ে দিয়ে তার মন বিষিয়ে দিয়েছিল, এজন্য সে একাজটা করেছিল। কারণ যাই হোক, সে পরিকল্পনা করল যে কিংস ল্যান্ডিংয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে!
শুরুটা হয়েছিল মোটামুটি নিরীহভাবেই। ততদিনে সবাই জানে যে এয়রিস আর টাইউইনের সম্পর্ক খারাপ এবং এয়রিস প্রায়ই উল্টোপাল্টা আচরণ করে বসে। ডেনিস ঠিক করল যে ডাস্কেনডেল থেকে কিংস ল্যান্ডিংয়ে খাজনা দেয়া বন্ধ করে দিবে। ব্যাপারটা যখন নজরে এল, সে রাজাকে অনুরোধ করল ডাস্কেনডেলে এসে তার আবেদন শুনতে। এরকম অনুরোধ রাখার কোন কারণ নেই, বিশেষ করে এয়রিসের মত সন্দেহবাদী রাজা কেনইবা যাবে এই মামুলি লর্ডের শহরে। কিন্তু যেই না টাইউইন এয়রিসকে এই পরামর্শ দিল, তাকে বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যেই হয়তো এয়রিস জানিয়ে দিল যে সে ডাস্কেনডেলে যাবে। টাইউইন বারবার নিষেধ করার পরেও কোন সতর্কতা ছাড়াই মাত্র একজন কিংসগার্ড আর ছোট্ট এক বহর নিয়ে এয়রিস ডাস্কেনডেল গিয়ে পৌঁছাল। এত সহজে তার উদ্দেশ্য সফল হবে এটা হয়তো ডেনিসও ভাবেনি। ডার্কলিনদের দূর্গের নাম ডান ফোর্ট। এয়রিস সেখানে ঢোকার সাথে সাথে তাকে ডার্কলিন হাউজের সৈন্যরা বন্দী করলো। রাজাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিল কিংসগার্ডের সেই সৈন্যসহ বহরের অনেকেই। এই খবর কিংস ল্যান্ডিংয়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে সবাই ক্ষোভে যেন ফেটে পড়ল। অনেকেই বলল অবিলম্বে সৈন্যবাহিনী নিয়ে ডাস্কেনডেল আক্রমণ করা উচিত। এতে অসুবিধা হলো ডান ফোর্টের অবস্থান। এটা একদম সমুদ্রের কিনারের বন্দরে অবস্থিত, তাই সমুদ্রপথে বা স্থলপথে কোন বাহিনী এলেও খুব সহজে দূর্গ ভেঙে ঢুকতে পারবে না। লর্ড ডেনিস আবার এটাও বলেছে যে ওভাবে আক্রমণ করে দূর্গে ঢুকতে গেলে সাথে সাথে রাজাকে হত্যা করা হবে। কিংস ল্যান্ডিংয়ে রাজার সভাসদদের মধ্যে ব্যাপক তর্ক আর দ্বিধা দেখা গেল। শুধু টাইউইন সবকিছুর মধ্যেও বরফের মতো শীতল। এর মাঝে সে লোক পাঠিয়ে দিয়েছে। ডাস্কেনডেলের চারপাশে এরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি জানিয়েছে তাকে। টাইউইন ডাস্কেনডেলকে চারিদিক থেকে ঘিরে আটকে রাখল। সাথে এটাও বলে পাঠাল যে অবিলম্বে রাজাকে ছেড়ে দিলে ডার্কলিনদের কিছুই হবে না। এভাবে পুরোপুরি বন্দী হয়ে কিছুদিন যাবার পরই ডেনিসের জোর কিছুটা কমে এল। যদিও তখনও সে আশা করছিল কোনভাবে একটা সমঝোতায় আসা যায় কিনা। কিন্তু লর্ড টাইউইন তার সাথে কোনপ্রকার আলাপ-আলোচনাতেই আসতে চাইল না। প্রায় ছয় মাস এভাবে বন্দী পরিবেশে বদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। ডান ফোর্টের ভেতরে খাদ্যাভাব, পানীয়ের অভাবে করুণ এক পরিবেশ। ডেনিসের তখনও আশা যে টাইউইন হয়ত অচিরেই নমনীয় হবে। কিন্তু যারা টাইউইনের দৃঢ় কঠোরতার সাথে পরিচিত, তারা জানে এ কখনই হবার না। সময়ের সাথে সাথে বরং টাইউইন আরো কঠোর হয়ে উঠল। শেষবারের মত সে নির্দেশ পাঠাল – অতিসত্ত্বর রাজাকে ছেড়ে দাও, নইলে দূর্গ ভেঙে রাজাকে উদ্ধার করব। আর দূর্গের ভেতরে যত ছেলে, মেয়ে, নারী, শিশু আছে সবাইকে শূলে চড়াব।
দূর্গের বাইরে টাইউইনের সাথে পুরো রাজসভার সদস্যরাই ছিলেন। তারা অনেকে তখনও রাজার প্রাণের হুমকি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন। টাইউইন তাদেরকে বলল, “ডেনিস ডার্কলিনের মত কাপুরুষ কখনই রাজাকে মেরে ফেলার মত সাহস রাখে না। আর যদি কোনভাবে মেরেও ফেলে, তাহলে আমাদের এখানেই তার চেয়ে যোগ্য রাজা দাঁড়িয়ে আছে,” এই বলে সে রেয়গার টারগারিয়েনের দিকে আঙুল তুলল। এই চূড়ান্ত মুহূর্তে কী কী হতে পারত সেটা আমরা জল্পনা-কল্পনা করতে পারি, কিন্তু এর কোনটাই আসলে ঘটলো না। এর আগেই কিংসগার্ডের সদস্য স্যার ব্যারিস্ট্যান সেলমি বিষয়টা নিজের হাতে তুলে নিল। ব্যারিস্ট্যানকে সবাই বলত ব্যারিস্টান দ্যা বোল্ড। কিন্তু এইদিন সে যা করার পরিকল্পনা করেছিল তা চরম বোল্ডনেসকেও ছাড়িয়ে যায়। তার পরিকল্পনা ছিল রাতের আঁধারে ডাস্কেনডেলের উঁচু দেয়াল হাতে বেয়ে বেয়ে ওঠা, সেটা টপকানোর পর গোপনে ছদ্মবেশে শহরের ভেতর ডান ফোর্টের কাছাকাছি যাওয়া, তারপর সেই দূর্গেরও দেয়াল খালি হাতে বেয়ে উঠে এয়রিস টারগারিয়েনের বন্দীকক্ষ খুঁজে বের করা। তাঁকে নিয়ে নিরাপদে আবার ডাস্কেনডেলের দেয়াল পর্যন্ত এসে গোপন দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসা। নিঃসন্দেহে পাগলাটে পরিকল্পনা। কিন্তু মানুষটা ব্যারিস্ট্যান বলেই টাইউইন এই পরিকল্পনায় সায় দিল। ব্যারিস্ট্যান আসলেই নিজ হাতে ডাস্কেনডেল ঢুকল, তারপর ভিক্ষুক সেজে ডান ফোর্টের দেয়ালের কাছে গেল। কিছু একটা ভোজ-টোজ চলছে ভেতরে। এই সুযোগে সেই দেয়ালও টপকে ভিতরে ঢুকে এয়রিসকে খুঁজে বের করল। তাকে এক ঝটকায় মুক্ত করে যখন সে প্রায় বেরিয়ে এসেছে, তখন বিপত্তিটা বাধল। রাজা পালিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে কেউ একজন ঘন্টা বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে দিয়েছে। পালানো বাদ দিয়ে তখন ব্যারিস্ট্যান রুখে দাঁড়াল। সকলকে কচুকাটা করে রাজাকে অক্ষত অবস্থায় নিয়ে বেরিয়ে এল। এর পরের ঘটনাটুকু খুব দ্রুত ঘটে গেল। বন্দী রাজাকে হারিয়ে ডেনিসের সামনে সমর্পণ করা ছাড়া আর কোন উপায়ই রইল না। ডার্কলিন হাউজের নীল-নকশাকারীদের ধরে রাজার সামনে উপস্থিত করা হলে এয়রিস সবার শিরোশ্ছেদের নির্দেশ দিল। ডেনিসের স্ত্রীর জিহ্বা কেটে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল। ডার্কলিন হাউজের সাথে দূরসম্পর্কের যোগাযোগ আছে এমন কেউই রাজার উন্মাদ রোষানল থেকে মুক্তি পেল না।
ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দীদশায় থাকতে থাকতে এয়রিস পুরোপুরি উন্মাদে পরিণত হলো। বন্দী অবস্থায় ডার্কলিনরা তার সাথে ভয়ানক বাজে ব্যবহার করেছে। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে অপমান করা হয়েছে প্রতিনিয়ত। ফিরে আসার পর থেকে এয়রিস নির্দেশ জারি করল যে এখন থেকে কেউ তাকে ছুঁতে পারবে না। চুল দাড়ি কামানো বন্ধ হয়ে গেল। অকর্ষিত কেশ, শ্বেতশুভ্র জটাপাকানো শ্মশ্রু, কালচে হলুদ বাঁকানো নখরে এয়রিস তখন এক সাক্ষাৎ বুনোমানুষ। রেড কিপ প্রাসাদ থেকে বের হওয়াও পুরোপুরি বন্ধ করে দিল সে। এর পরের চার বছরে (২৭৭ – ২৮১) তার ভেতরে অবিশ্বাস বাড়তে বাড়তে পাকাপোক্ত ধারণায় রূপ নিল। এয়রিসের মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে ডাস্কেনডেলে বন্দী থাকাকালীন সময়ে টাইউইন ও রেয়গার সমঝোতায় চলে এসেছিল। ডার্কলিনরা তাকে মারলে রেয়গার রাজা হবে আর টাইউইনের মেয়েকে বিয়ে করবে। এই ভবিষ্যতের ভয়ে শেষমেশ এয়রিস তার ফুপাতো ভাই স্টেফন ব্যারাথিয়নের শরণাপন্ন হল। প্রথমে তাকে রাজসভার সদস্য বানিয়ে এয়রিস তাকে দায়িত্ব দিল এসোসের ভলান্টিস নগর থেকে রাজকীয় কোন কুমারী মেয়েকে খুঁজে আনার। শর্ত ছিল সে মেয়ের রক্তে ওল্ড ভ্যালিরিয়ার ড্রাগন-রক্ত থাকতে হবে। বোঝা যাচ্ছিল যে এই যাত্রা সফল হলে স্টেফনকেই এয়রিস হ্যান্ড বানাবে আর টাইউইনের পরিণতি হবে দেশদ্রোহীর অভিযোগ মাথায় নিয়ে মৃত্যুর। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে স্টেফন এমন পাত্রী জোগাড়ে ব্যর্থ হল, আর ফেরার পথে তার জাহাজ স্টর্মস এন্ডের খুব কাছাকাছি এসে পাথরের আঘাতে ডুবে গেল। স্টেফনের বড় দুই ছেলে রবার্ট আর স্ট্যানিস স্টর্মস এন্ডের মিনারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখল চোখের সামনে তাদের বাবার জাহাজ ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। এই খবর কিংস ল্যান্ডিংয়ে পৌঁছানোর পর এয়রিস রাগে উন্মত্তের মতো আচরণ করতে লাগল। বারবার গ্র্যান্ড মেয়স্টার পাইসেলকে বলতে থাকল যে এসবই টাইউইনের কারসাজি। নিশ্চয়ই সে কোনভাবে আমার উদ্দেশ্য জানতে পেরে চক্রান্ত করে স্টেফনের জাহাজ ডুবিয়ে তাকে মেরেছে। আমি যদি ওকে হ্যান্ড পদ থেকে সরাই তাহলে আমাকেও মেরে ফেলবে। এয়রিসের প্যারানয়া এতোটাই বাড়ল যে সে টাইউইন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ সবাইকেই তার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী মনে করতে শুরু করল। এসময়ই সে পেন্টোস থেকে এক খোজা গুপ্তচরগুরুকে ডেকে আনল। নাম তার ভ্যারিস। এয়রিসের যুক্তি – ওয়েস্টেরোসে যে মানুষের কোন পরিবার, বন্ধু বা আত্মীয় নেই একমাত্র তাকেই বিশ্বাস করা যায়। রাজকোষাগারের স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ভ্যারিস অচিরেই পুরো সাম্রাজ্যে গুপ্তচরদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক বানিয়ে ফেলল। এরপর থেকে এয়রিসের মৃত্যু পর্যন্ত ভ্যারিসের জায়গা রাজদরবারে পাকাপোক্ত হয়ে গেল। রাজার কাঁধের পেছনে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত ফিসফিসিয়ে তার কানে মন্ত্রণা দেয়াই হল ভ্যারিসের কাজ।
ডাস্কেনডেলের বন্দীদশায় থাকাকালীন এয়রিসের মনে কী চিন্তা চলেছিল তা আমরা কখনই জানতে পারব না। সন্দেহবাতিক তো আগে থেকেই ছিল, নতুন উপসর্গ যোগ হলো ড্রাগন নিয়ে অসুস্থ নেশা। এয়রিসের আগেও অনেক টারগারিয়েন রাজারা ড্রাগন নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজেদের নিঃশেষ করে দিয়েছেন। এককালে ড্রাগন বশ মানিয়ে রাজ্য দখল করা পূর্বপুরুষদের নেহাতই ‘মামুলি’ সন্তানেরা কিছুতেই সেই মহিমাময় গৌরব ইতিহাস ভুলতে পারে না। তাই ড্রাগন জন্ম দেয়ার উদগ্র বাসনা থেকে সৃষ্টি হয়ে মনোবিকার। আর সে মনোবিকারে ছারখার হয়ে যায় আশেপাশের সবকিছু। এয়রিসের মধ্যে এই মনোবিকারের সূত্রপাত ডাস্কেনডেলের পর থেকেই। বন্দী অবস্থায় সে হয়ত ভেবেছিল, আজ যদি আমি ড্রাগনসওয়ার হতাম, তাহলে এরা আমাকে বন্দী করে রাখতে পারত না। আমার ড্রাগনবাহনের আগুনে পুড়ে মরত। ফিরে এসে ড্রাগনস্টোনের তলদেশের গুহায় রাখা ড্রাগনের ডিম খুঁড়ে এনে চেষ্টা চলল ফুটানোর। পুরনো হতে হতে অনেক ডিমই পুরোপুরি পাথরে পরিণত হয়েছে, কিন্তু তাতে এয়রিস উদ্যম হারায় না। ড্রাগনফুলকির কাছাকাছি দাহ্যতার আরেক বিধ্বংসী পদার্থ আছে। সাধারণ মানুষ বলে ‘ওয়াইল্ডফায়ার’, সবুজ রঙের তীব্র উদ্বায়ী আর দাহ্য তরল। এয়রিস আলকেমির সংস্থার গুণী রসায়নবিদদের ডেকে আনে। ওয়েস্টেরোসে এদেরকে বলা হয় “উইজডম”। এই উইজডমেরা ওয়াইল্ডফায়ার তৈরির গোপন সূত্র জানে। এদের বানানো তরল আগুন এয়রিসের বড়ই পছন্দ হল। এতদিন নাখোশকারীর গলা কাটা হত বা জিহ্বা কেটে নেয়া হত। এইবেলা শুরু হল আগুনে পোড়ানো। অপরাধ অল্প হোক, বেশি হোক, শাস্তি একটাই – আগুন।
এতকিছুর মধ্যেও ‘চিরপুরাতন ভৃত্য’ টাইউইন ল্যানিস্টার নীরবে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। স্টেফন ব্যারাথিয়নই ছিল একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প, সেও যখন মারা গেল তখন টাইউইনকে সরিয়ে হ্যান্ড হতে পারে এমন কেউ সাত রাজ্যে পাওয়া যায় না। টাইউইনও এই সত্যটা জানে বলেই কর্তৃত্বের সাথেই নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তবে অবশেষে ক্যাস্টারলি রকের অটল এই পর্বতও টলে উঠল। লোকে যতই বলুক টাইউইন ল্যানিস্টার পাষাণের চেয়েও শক্ত, তবু তারও দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা হলো তার সন্তান জেইমি ও ল্যানিস্টার পরিবারের উত্তরাধিকার। জেইমির বয়স তখন পনের। সে বয়সেই অস্ত্রচালনায় চৌকস এই কিশোর নাইট পদবিপ্রাপ্ত হয়েছে। ২৮১ সালে যখন বয়স্ক কিংসগার্ড স্যার হারল্যান মারা গেলেন, তখন সেই উত্তরাধিকারে হাত বসাল এয়রিস। জেইমিকে শূন্য কিংসগার্ড হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইল। কিংসগার্ডরা আমৃত্যু রাজার প্রতিরক্ষার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ থাকে। তারা কোন সম্পত্তির মালিক হতে পারে না, কোন হাউজের লর্ড হতে পারে না, কাউকে বিয়ে করতে পারে না, বাচ্চার বাবা হওয়া তো দূরের কথা। অত্যন্ত সম্মানজনক পদবি হলেও টাইউইন ল্যানিস্টারের চোখে তার একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরীকে পুরোপুরি আটকে ফেলার জন্য এয়রিস এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল। তারপরেও স্থিতধী টাইউইন ল্যানিস্টার রাজদরবারে হাঁটু গেঁড়ে রাজার অনুগ্রহে বাধিত ও আনন্দিত হবার অভিনয় করল। তারপর সে অবস্থাতেই বলল, শারীরিক দুর্বলতার কারণে সে এখন হ্যান্ডের দায়িত্ব ছেড়ে ক্যাস্টারলি রক ফিরতে চায়। বিশ্রাম নিতে চায়। এবারে এতদিন পরে রাজা এয়রিস তার আবেদন মঞ্জুর করল। শেষ হলো বন্ধুত্ব ও আনুগত্যের প্রহসন।
একভাবে দেখলে টাইউইন আর এয়রিস হতে পারত ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণ বন্ধুত্বের উদাহরণের একটি। কিন্তু দুইজনের চরিত্রের পার্থক্য এতটাই বেশি যে কৈশোরে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তা যৌবন ও পূর্ণবয়সে এসে ভাঙতে ভাঙতে জটিল, কুটিল, তিক্ত সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। টাইউইনের দক্ষ নেতৃত্ব যেমন এয়রিসের মনে নিজের অক্ষমতার অনুভবকে জোরালো করে ধীরে ধীরে তাকে অবিশ্বাসী, সন্দেহপ্রবণ, মানসিক বৈকল্যকবলিত উন্মাদে পরিণত করেছে। তেমনি এয়রিসের ক্রমাগত অপমান আর লাঞ্ছনায় টাইউইনও কঠোর ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। হয়ত নিষ্ঠুরতায় তাদের মিল ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই যুদ্ধের রক্তাক্ত ময়দানেই সে বন্ধুত্ব ফুল হয়ে ফুটেছিল। দিনশেষে টারগারিয়েনদের সাম্রাজ্য রাজা ২য় এয়রিস টারগারিয়েনের মাধ্যমেই শেষ হবে, আর সেই সাম্রাজ্যের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিবে তার যোগ্যতম হ্যান্ড টাইউইন ল্যানিস্টার। কিন্তু সেসব টাইউইনের অব্যাহতির আরো বছরখানেক পরের কথা। আর সেসব কথা আরেকদিন বলা যাবে’খন!
*লেখাটি George R R Martin এর A World of Ice and Fire বইয়ের Aerys II অংশের ভাবানুবাদ।