বাকের ভাই চরিত্রের নাম শোনেননি এমন মানুষ ভূ-ভারতে পাওয়া মুশকিল। এমনকি নব্বইয়ের দশকের এই নাটকটি দেখেননি, এমন পিচ্চিরাও শুনেছেন এই নাম। একটু বড় সাইজের কালো চশমা, লাল পোলো শার্ট আর তর্জনীতে চাবির রিং ঘোরানো বাকের ভাইয়ে বুঁদ ছিলো সেই সময়ের মানুষগুলো। দুর্দান্ত জনপ্রিয় এই চরিত্রে রূপদানকারী আসাদুজ্জামান নূরকেও সকলেই চেনেন। শুধু বাকের ভাই না, হুমায়ূন আহমেদের আরো একাধিক টিভি নাটকে অনেকগুলো শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গুণী এই শিল্পী। চলুন না জেনে নেই সেই চরিত্রদের, যাদেরকে আলোকিত করেছিলেন নূর!
অয়োময়ের মির্জাঃ
ভাটির প্রতাপশালী জমিদার মির্জা সাহেব। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে নিজের পাখিঘরে তাঁকে যেতেই হয়। সেখানে খাঁচা ঝাঁকিয়ে পাখিদের ব্যায়াম করানো দেখেন! দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার। একজন চিরায়ত সামন্তের কঠোর-কোমল এবং খামখেয়ালি চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।
‘কোথাও কেউ নেই’-এর বাকের ভাইঃ
পাড়ার মাস্তান ডু গুডার বাকের ভাই। হাওয়া মে উড়তা যায়ের ভক্ত বাকের ভাই পাড়ার সবারই ভরসা। তিনি আবার ভালবাসেন মুনাকে। একসময় এলাকার প্রভাবশালী চোরাকারবারি কুত্তাওয়ালীর কাজে বাধা দেয়ায় বাকেরকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয় মিথ্যা হত্যা মামলায়। নাটকের চরিত্র বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় বাতিলের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় মিছিল বের করে জনগণ। টিভির নাটক নিয়ে এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনও দেখা যায়নি।
এইসব দিনরাত্রির রফিকঃ
একটি নাটক প্রচারের সময় ব্যস্ত-জ্যামে বিধ্বস্ত ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যেত। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল সেই নাটকের গল্প। নাটকের নাম এইসব দিনরাত্রি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছেলের নাম রফিক, অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। বেকার রফিক বেঁচে থাকে প্রেম-অপ্রেম, আনন্দ-বেদনা আর ট্র্যাজেডির জীবন নিয়ে। নিজের চোখের সামনে মরতে দেখে আদরের ভাতিজি টুনিকে।
বহুব্রীহি’র আনিসঃ
নাটকের গল্পটা এমন, বিপত্নীক আনিস দুটো বাচ্চা নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠে। মাতৃহীন বাচ্চা দুটোকে বড় করতে হিমশিম খায় সে। অসহায় আনিস নানা চেষ্টা করে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে। বাড়িওয়ালার ডাক্তার বড় মেয়ের সাথে নিজের বাচ্চাদের সখ্য দেখে আনন্দ পায় আনিস। এক পর্যায়ে প্রেম হয়ে যায় দুজনের।
নিমফুলঃ
এক পর্বের নাটক নিমফুলে আসাদুজ্জামান নূর অভিনয় করেছিলেন এক চোরের চরিত্রে। চুরির অপরাধে বেঁধে রাখা হয়েছে তাঁকে। সমস্ত গ্রামবাসীর সামনে শাস্তি হিসেবে খেজুরের কাঁটা দিয়ে তার চোখ উপড়ে নেয়া হবে। এই ঘটনা দেখতে গ্রামে সাজ সাজ রব পরে যায়। চোরের ছেলেকেও বেঁধে রাখা হয়েছে তার সাথে। অবাক দৃষ্টিতে সে মানুষের নিষ্ঠুরতার দিকে তাকিয়ে থাকে!
নক্ষত্রের রাতঃ
ওসমান সাহেবের বাড়িতে অদ্ভুত সব লোকের বাস। একদিন সেই বাড়িতে আগমন ঘটে রহস্যময় যুবক হাসানের। সে স্বভাবে কিছুটা কবি। মাঝে মাঝেই সে কবিতা, তার নিজের ভাষায় পদ রচনা করে। তার প্রধান উদ্দেশ্য নিজের কিডনি বিক্রি করে সেই টাকায় দেশ-বিদেশ ঘোরা। ওসমান সাহেবের বাসায় সে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করে। নাটকের শেষদিকে উন্মোচিত হয়, সে আসলে একজন শিক্ষিত মানুষ। ওই বাসায় মিথ্যে পরিচয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। সবার মন খারাপ করিয়ে হাসান বাসা থেকে বিদায় নেয়। ওসমান সাহেবের মেয়ের ভালবেসে বাড়ানো হাত উপেক্ষা করে রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা আওড়ায়,
”The woods are lovely, dark and deep
But I have promises to keep
And miles to go before I sleep”
এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের আরও অনেক নাটকে একাধিক চরিত্রে আপন স্বকীয়তায় ভাস্বর ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। ব্যক্তিজীবনে স্মিত এই মানুষটি হুমায়ূনের হাত ধরে পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার শিখরে, পরে অভিনয় করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র, আগুনের পরশমনি ও চন্দ্রকথায়। বিটিভির স্বর্ণালী যুগের সেই নাটকগুলো চাইলেই দেখে নিতে পারেন ইউটিউব থেকে।