গেল বছরের ঈদে জয়দীপ মুখার্জি-শাকিব খান জুটি উপহার দিয়েছিল শিকারী। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের দর্শকরা রীতিমতো লুফে নিয়েছিল। এবারের ঈদে সেই একই জুটি উপহার দিয়েছে নবাব। নায়িকা অবশ্য বদলে গেছে। শ্রাবন্তীর বদলে এবারের নায়িকা শুভশ্রী। তাতেও ফলাফল একই রকম- নবাব দেখতে হলে দর্শকদের ব্যাপক ভিড়।
তো এই যে দর্শকরা নবাব দেখতে ভিড় করেছে, তার কারণ কী কী?
প্রথম কারণ অবশ্যই সেই পুরনো- শাকিব খানের লুক। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার দর্শকরা শাকিব খানের যে লুক দেখে অভ্যস্ত ছিল, সেটা গত কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে বদলে ফেলছিলেন তিনি। আর শিকারীতে এসে নতুন শাকিব খানকে দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছিল ঢাকার দর্শকরা। নবাবে সেই শাকিব আরও পরিবর্তিত, আরও পরিণত।
পরিণত হয়েছে শাকিব খানের অভিনয়ও। বিপরীতে শুভশ্রী তেমন ভালো করেননি। তবে অন্যরা সে ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছেন- সব্যসাচী চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত, অমিত হাসান, খরাজ মুখার্জীরা। তবে পরিণত হওয়া তো দূরের বিষয়, কাহিনির হিসেবে নবাব বরং উল্টো পথে যাত্রা করেছে।
এত দিন তাও ঢালিউড-টালিউডের মূল ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলো তামিল চলচ্চিত্রের কাহিনি নিয়ে বানানো হচ্ছিল, নবাব বানানো হয়েছে আমির খানের সারফারোস, শাহরুখ খানের বাদশা-র মতো এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় হিন্দি ছবির কাহিনি জোড়াতালি দিয়ে।
আফসোস করার অবসর আছে লোকেশন নিয়েও। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার ৩৫ ভাগ বাংলাদেশে শুটিংয়ের দাবি তোলা হলেও, প্রায় পুরো চলচ্চিত্র জুড়েই দেখতে হয়েছে কোলকাতার পথ-ঘাট আর ভারতের তেরঙা। শিকারীতে তাও শাকিব খানের বাংলাদেশে কাটানো জীবনের কিছু ফ্ল্যাশব্যাক ছিল, এটাতে এক নবাব তথা শাকিব খানের বাংলাদেশ থেকে আসা ছাড়া এপারের আর কিছুই নেই।
আফসোস কেবল এপার থেকে নয়, ওপারের সাংবাদিকরাও করতে পারেন। সিনেমাটাতে ওপারের মিডিয়া জগতের যে ছবি উঠে এসেছে, তা দেখে তাদের কপাল চাপড়ানোই স্বাভাবিক। নায়িকা নাকি বিনোদন সাংবাদিক থেকে হয়ে গেছেন ক্রাইম রিপোর্টার! তার বস আবার তাকে কথায় কথায় ফের বিনোদনে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন। আবার ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলন কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের সামনে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাজ্যের হিরো হয়ে ওঠা রাজীব চৌধুরী তথা নবাব, সাংবাদিকরা কেউ চিনতেই পারে না!
শেষ পর্যন্ত অবশ্য নবাব কেবল আফসোসের গল্পই নয়। এই সব ফাঁকতাল স্বত্ত্বেও চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত বেশ উপভোগ্যই বটে। বিশেষ করে ওপার বাংলার টানে উচ্চারিত সংলাপের জন্য চলচ্চিত্রটিতে যে পরিমাণ কমিক রিলিফ ছিল, তারচেয়ে একটু বেশিই অনুভূত হয়েছে।
তবে চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে বড় চমক এগুলোর কোনোটিই নয়- ওস্তাদ আমজাদ আলী খাঁ। চলচ্চিত্রটিতে তার ক্যামিও উপস্থিতির পাশাপাশি, একটি গানও আছে- সাইয়া বেঈমান। অবশ্য এই গানটি নিয়ে প্রযোজকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রচারণা করা হয়নি, এমনকি গানটি ইউটিউবে বা অন্য কোথাও প্রকাশও করা হয়নি। অথচ সিনেমাটির সবচেয়ে উপভোগ্য অনুষঙ্গ কিন্তু এই গানটিই। শুধু এই গানটির জন্যই দেখা যেতে পারে নবাব। আর বাকি সব ইস্যুতে নবাব কোনোভাবেই লাজবাব কিছু দিতে পারেনি সিনেমা হলের উৎসুক দর্শকদের।