স্যান ডিয়েগো কমিকন উপলক্ষ্যে সদ্যই রিলিজ পেয়েছে ডিসি-ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সুপারজায়ান্ট জয়েন্ট ভেনচার ‘জাস্টিস লিগ’-এর তৃতীয় ট্রেইলার। তা দেখার পর ফ্যান-ফলোয়ারদের মধ্যে শেষভাগ নিয়ে চলছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। কী আছে শেষভাগে? ওহ্ ট্রেইলারটি দেখেননি এখনো? আগে বরং দেখে নিন এখান থেকে।
এই ট্রেইলার কতোটা ব্যাড অ্যাস বা কী পরিমাণ এপিক তা নিয়ে কথা বলার সময় নেই আপাতত। বলছিলাম শেষ দৃশ্যের কথা। সেখানে আলফ্রেড কার সাথে যেনো আলাপে রত। কারো ফিরে আসায় ‘আশা’ (পড়ুন হোপ) করছে যে, বেশি দেরি হয়ে যায়নি। এই দৃশ্য নিয়ে ভক্তরা পুরো একটা দিন গরম রেখেছেন ইন্টারনেট। এক পক্ষ বলছে, “নিশ্চয়ই ব্যক্তিটি ‘ম্যান অফ স্টিল’ সুপারম্যান সাহেবই। আফটার অল, (স্পয়লার অ্যালার্ট। কারো যদি ডন অফ জাস্টিস দেখা না থাকে তাহলে এখান থেকেই অফ যান) ডন অফ জাস্টিসের শেষে তো ওর বেঁচে ফেরারই ইঙ্গিত ছিলো। ওই যে দেখো আলফ্রেডের পেছনে রেড কালারড কেইপ (লাল দোপাট্টা)-এর ছায়া দেখা যায়। সে-ই যদি না হবে তাহলে আলফ্রেড বার বার ‘হোপ’, ‘হোপ’ করছে কেনো?” তো আবার অন্য আরেক পক্ষ বলছে “এ গ্রিন ল্যান্টার্ন না হয়ে যায়ই না! ট্রেইলারে কয়বার গ্রিন লাইট দেখা গেছে হিসেব আছে?”
ভেবেছিলাম এই ডিবেট আরো কিছুদিন চলবে। মুভি রিলিজের তো ঢের দেরি। সেই নভেম্বর। এ সময় বাজার গরম না থাকলে চলে? নভেম্বরের শুরুতেই আবার আসছে মার্ভেলের থর সিকুয়েল। জোর ফাইট দিতে হবে না? ওয়ান্ডার ওমেন আর স্পাইডারম্যানের ব্যবসায় তো বেশ সেয়ানে-সেয়ানে টক্করই গেলো। কিন্তু কিসের কী। ট্রেইলার নিয়ে ওই আলোচনা একদিন বাদেই খতম। কারণ পরদিনের আরেকটি খবর। বিশেষ সূত্রে জানা গেলো ‘সুপারম্যান’ হেনরি ক্যাভিল গোঁফ চুরির শিকার। আর যে সে চুরি নয়। তা পুষিয়ে দিতে বিশাল এক দঙ্গল মানুষের টানা বেশ ক’দিনের খাটাখাটনি তো যাবেই, টাকাও গচ্চা যাবে বেশ মোটা অংকের।
ম্যান অব স্টিলের লাইফ লিড করা যে বইয়ের পাতার মতো ইজিগোয়িং নয় মিস্টার হেনরি ক্যাভিলের ভালোমতোই জানা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। (আরো একবার স্পয়লার অ্যালার্ট) কাগজে কলমে অবিশ্বাস্য অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী, অথচ হাতকড়া পরে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়, ব্যাটম্যানের কাছে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেতে হয় আবার সিনেমার শেষে মারাও পড়েন। সবই না হয় বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে এভাবে গোঁফ উপড়ে নেবেন? এ তো একেবারে পৌরুষের উপর হস্তক্ষেপ!
খোলাসা করেই বলা যাক। ডিরেক্টর জ্যাক স্নাইডার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কারণে শ্যুট পুরো শেষ না করে জাস্টিস লিগ থেকে সরে গিয়েছিলেন, এটা পুরোনো খবর। পরে দায়িত্ব পেয়ে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী জস হোয়েডন শ্যুট শেষ করেছিলেন, কিন্তু পরে মনে হয়েছিলো গল্পের ডিটেলিংয়ের প্রয়োজনে কিছু রি-শ্যুট দরকার। সেই ডিটেলিংয়ের বাজেটও কম না। পচিশ মিলিয়ন ডলার। বাকিদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ফেঁসে যান হেনরি। জাস্টিস লিগের শুটিং শেষে শিডিউল দিয়ে রেখেছিলেন মিশন ইম্পসিবল সিক্সের জন্য। ভালো ছেলের মতো শ্যুটও করে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে জানানো হলো রিশ্যুটের কথা। হেকটিক হলেও বহু কষ্টে দুই মুভির শিডিউল মেলালেন হেনরি। এমআই সিক্স টিমও জাস্টিস লিগের শ্যুটের জন্য তাকে ছাড়তে রাজি। তবে শর্ত একটা আছে। এটার চরিত্রের প্রয়োজনে তাকে যে পুরু গোঁফখানা রাখতে হয়েছে, তাতে তার যে লুক তৈরি হয়েছে, সেটায় বদল আনা যাবে না। বোঝো।
ইনস্টাগ্রামে শেয়ার হওয়া ছবিতে হেনরির লুক সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া যায়। এই লুক অক্ষত রেখেই জাস্টিস লিগ অংশের শ্যুট করতে হবে হেনরিকে।
এবার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিলো ডিসি আর ওয়ার্নার ব্রাদার্সের। সুপারম্যানকে বাদ দিয়ে নতুন কাস্টিং করা তো আর এখন সম্ভব না। তাই কম্প্রোমাইজ করতে রাজি হয় তারা। দশাসই গোঁফ-সহই শ্যুটে অংশ নেবেন হেনরি। তাহলে কি গোঁফওয়ালা সুপারম্যান দেখতে যাচ্ছি আমরা? উত্তর হচ্ছে, না। পোস্ট-প্রোডাকশনে বিশাল বড় একটা টিমের শ্রম যাবে স্ক্রিন থেকে ডিজিটাল ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে হেনরি গোঁফ চুরির মধ্য দিয়ে। কানাঘুষা আছে ২৫ মিলিয়নের বড় একটা অংশই এই ডিজিটাল গোঁফচুরির পেছনে ব্যয় হবে। আর টেকনিশিয়ানদের দক্ষতার উপর কমিকস ফ্যানেদের অগাধ আস্থা। বড় পর্দায় দেখার সময় নিশ্চিত বুঝিয়ে দেবে- “মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না।” শুধু এতে আরেকটা ক্ষতি অলক্ষ্যে ঠিকই হয়ে গেছে। সুপারম্যান না গ্রিন ল্যান্টার্ন, সেই জল্পনায় অল্প না, এক বালতি জল ঢেলে দেয়া হয়েছে।
সুপারম্যান চরিত্রে গোঁফ নিয়ে অভিনয় করলেও টেকনোলজির হাত ধরে এ যাত্রা হয়তো পার পেয়ে গেছেন মিস্টার ক্যাভিল। কিন্তু তার গোঁফ ইন্টারনেট থেকে ছাড় পায়নি এক চুলও। যথারীতি ঝড় উঠেছে ইন্টারনেটজুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে কী আর এমন ক্ষতি হতো গোঁফটা রয়ে গেলে? তাগড়া গোঁফ পুরুষত্বের এক জাজ্জ্বল্যমান প্রতীক। সিম্বল অফ ম্যানলিনেস। সেখানে সুপার‘ম্যান’, ‘ম্যান’ অফ স্টিল একজন অতি-পুরুষালি অতিমানব। তার তো গোঁফ একটা থাকতেই পারতো। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এমনই মাতম। ফটোশপে আক্ষেপমোচনে হাত দিয়েছেন অনেকে।
“গোঁফকে বলে তোমার আমার গোঁফ কি কারো কেনা?
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।”
কেউ কেউ জিলেট-কে পরামর্শ দিয়েছেন ২০১৩ সালের এই বিজ্ঞাপনটিকে এখন আবার ব্যবহার করতে। একদম ঝোপ বুঝে কোপ হবে কিন্তু।
শিল্পীরাও বিরত থাকেননি কল্পনা করা থেকে।
হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন। চেহারায় এরকম একটা মেক্সিকান ধাঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
তবে এতোটাও নয়।
এবার হেনরি ক্যাভিল, থুক্কু ম্যান অব স্টিলের জন্য সময়োপযোগী একটি সচিত্র এবং একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল-
(দেখুন ভিডিও সহ)
ওদিকে যে যে ওয়েবসাইটেই নিউজটা দেখেছি, স্পন্সরড অ্যাডগুলোও কিন্তু বলিহারি।
আর কে জানে, একদিন হয়তো এমন ডার্ক নাইটও দেখতে হতে পারে।
তবে যা-ই বলুন, জাস্টিস লিগে একতার অভাব নেই। সুপারম্যানের জন্য আজ এক হয়েছেন সকলেই।
এনাফ ইন্টারনেট ফর টুডে!