এখন যুদ্ধ যার, যৌবন যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

দুঃখিত শ্রদ্ধেয় হেলাল হাফিজ, বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী কালজয়ী পংক্তিটি বদলে দেয়ার জন্য। যদিও অন্য একটি বিবেচনায় এই লাইনটিও সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে। যুদ্ধ মানেই তো ত্যাগ। সবসময় জীবনের ক্ষতি না হলেও, সময়ত্যাগ তো ঘটেই। সীমান্তের প্রহরায়, উত্তাল সমুদ্রে, বা কোনো দূরদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কিংবা অন্য কোনো গুরুদায়িত্বে বছরের পর বছর অতন্দ্র রজনী কেটে যায়, ওদিকে হামাগুড়ি দেয়া সন্তান স্কুল-কলেজের বেড়া অতিক্রম করে নিজের বাবাকে ভিডিওকলে ধীরে ধীরে পৌঢ় হতে দেখে। অর্থাৎ যৌবন ‘বিগত’ হতে থাকে। কখনও বাবা হয়তো দায়িত্বের সময়সীমা শেষের অনেক আগেই ফিরে আসে। কিন্তু এই বাবা আর আগের বাবার মাঝে অনেক ফারাক। এই বাবা হয় যুদ্ধাহত, নয়তো দুর্ঘটনাকবলিত।

যাক সে কথা। এসে গেছে আরেকটি ফোর্থ অব জুলাই। বিশ্বের ত্রাণকর্তা (!!), শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত (!!!) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। সে উপলক্ষ্যে প্রতিবারই একগাদা ক্যাম্পেইন রিলিজ হয়। তবে তার বেশিরভাগ বানানো হয় একদিনের জন্যই। এবারও হয়েছে। তবে এর মধ্যে একটা খানিক ব্যতিক্রম। ফোল্ড অব অনার ফাউন্ডেশনের সাথে হাত মিলিয়ে মল্ট বেভারেজ ব্র্যান্ড ‘বাডউইজার’ একটু প্রলংড কনটেক্সটে যাকে বলে এক্সটেন্ডেডেবল একটি ক্যাম্পেইন রিলিজ করেছে। ফাউন্ডেশনটি যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা মিলিটারি ট্রেনিং বা মিশনে দুর্ঘটনাকবলিত সেনাসদস্যদের সন্তান ও স্ত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনটিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন স্টার ওয়ার্স মুভি খ্যাত অ্যাডাম ড্রাইভার। অ্যাডামকে এই বিজ্ঞাপনের অংশ করার পেছনে একটা ছোট্ট ব্যাকস্টোরিও আছে। স্টার ওয়ার্সের কাইলো রেনের ভূমিকায় অভিনয় করার অনেক বছর আগে অ্যাডাম ড্রাইভার ছিলেন ইউএস মেরিনের সদস্য। ইরাকে পাঠানোর জন্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে ইরাক যাবার যখন মাত্র কয়েকদিন বাকি, সে সময় দুর্ভাগ্যবশত তিনি মাউন্টেন বাইকিং দুর্ঘটনার শিকার হন। যার জেরে মিলিটারি ছাড়তেও বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তাই বাডউইজার যখন বিজ্ঞাপনটির প্রস্তাব নিয়ে তার কাছে যায়, স্বভাবতই তিনি তাদের আর ফিরিয়ে দিতে পারেননি। আফটার অল, এর সাথে তার জীবনের কিছুটা হলেও সম্পৃক্ততা রয়েছে।

৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটির স্টোরিলাইন বেশ সরল আর স্ট্রেইটফরোয়ার্ড। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন এক সদস্য পিঠের ইনজুরিতে পড়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। শারীরিক অবস্থার কারণে অন্য কিছু করে জীবিকা নির্বাহও তার জন্য কষ্টের। কিন্তু যোদ্ধা তো। জীবনসংগ্রামে হাল ছাড়েনি। কিন্তু পারিবারিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। তার একমাত্র মেয়ের কলেজের শেষ বর্ষের পড়ালেখা শেষ করা আজ অনিশ্চিত। এই পরিবারটির সাথে দেখা করতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন অ্যাডাম। বাকিটা বুঝতেই পারছেন। সোশ্যাল ক্রাইসিস নিয়ে তৈরি এমন অসংখ্য ভিডিও আপনিও হয়তো দেখেছেন। মেইড আপ ভিডিও বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু এরপরও শেষের সারপ্রাইজের জায়গাটা একটু হলেও হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলোতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মর্যাদা এমনিতেই অনেক। ফোল্ড অব অনার ফাউন্ডেশনের জন্য এক সপ্তাহের বোতল বিক্রির টাকা থেকে প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের ফান্ড তুলতে সহায়তা করেছে বাডউইজার।

তো প্রিয় আমেরিকাবাসী, স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। বর্তমান রাষ্ট্রনায়কের কাছ থেকে ঠিকঠাকমতো স্বাধীনতা বুঝে পাচ্ছেন তো?