ক্যামেরা-লাইভ-অ্যাকশন

প্রতি ঈদেই একচিত্র। নতুন টাকায় ‘সালামি’ এবং তারপর কাড়াকাড়ি। ১০, ২০, ৫০ বা ১০০ টাকার কচকচে নোটের ছড়াছড়ি। বছরের পর বছর চলতে থাকায় নিউজ রুমের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে এই কাণ্ড। খুব ভোরে যারা আসে, তারা অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে সবাই। কখন শুরু হবে, দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব। ঈদের সালামি নিয়ে সংবাদকর্মীদের আবেগ, উত্তেজনায় মনে হবে জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ তারা; বুঁদ হয়ে আছে, আফিমের মতো কোন এক নেশায়!

ঈদি না হলে কি চলে!!

আসলে এ ‘শিকল’ ভাঙার কোন উপায় জানা নেই কারও। ঈদ উপলক্ষে ঘুমের রাজ্যে ডুব দেয় অফিস-আদালত- ব্যাংক-বীমা। বন্ধ থাকে সংবাদ পত্রের প্রকাশনা। তাই দর্শকের টেলিভিশনের রিমোট-প্রীতি বাড়ে বহুগুণ। এর রসদ জোগাতেই নিজের আর কখনো সখনো পরিবারের ঈদটাও বিসর্জন দেয় টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা। সবার কথা বলতে আর শোনাতে গিয়ে, বলা হয় না, শোনানো  হয় না নিজের, নিজেদের কথা। অনেকটা ‘বিরহে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া’র মতো, কখনও কখনও বিরহ নিয়ে ভাববারও হয়না অবকাশ।

নিউজের ঈদ কিংবা ঈদের নিউজ

অন্য চ্যানেলের এক অভিজ্ঞতার কথা। ঈদের দিন রাজধানীর সম্ভবত মাটিকাটা এলাকায় বাধে সংঘর্ষ। জরুরি প্রয়োজনে অফিসে থাকা রিপোর্টারকে বলা হলো অকুস্থলে যেতে। শুরু হল তালবাহানা, যাবে না- কী দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি। বিকল্প হিসেবে আরেকজনকে পাঠানোর চেষ্টাও ব্যর্থ। এরপর আর কার ধৈর্য্যে কুলায়! চিৎকার, গালাগাল আর ধমকের চূড়ান্ত নিউজ রুমে। একবারের জন্যেও কারো মনে আসেনি, আজ ঈদের দিন। যাদের বকাবকি করা হচ্ছে, তাদের বাইরেও অনেক সহকর্মী আছে, যারা ভালোভাবে ডিউটি শেষ করে একটু হলেও ‘ঈদ করতে’ চায়। আর যারা গালি খাচ্ছে, তাদের ইচ্ছের কথা তো বাদই। আসলে তখন কোন কিছুই মনে থাকে না। নেশা, ভয়; পাছে স্ক্রিন যদি পিছিয়ে যায়!

সবার চোখ ক্যামেরায়, নিউজ এডিটরের চোখ মনিটরে

শুরুতেই বলেছিলাম, অনেকে খুব ভোরে আসে। মানে ৬টা বাজার আগেই। গ্রীষ্মে আলো ফুটলেও শীতে তখন কেবলই কুয়াশা-অন্ধকার। অনেকেরই ঈদের নামাজ পড়ারও সুযোগ হয় না।  অন্তত এক সাথে হওয়ার প্রশ্নই নেই। কেউ কেউ যেখানে কয়েক দফা জামাত হয়, সেখানে গিয়ে সামিল হয়। আসলে জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাত যে ইউনিট কাভার করে, তাদের সবাইকেই আসতে হয় খুব ভোরে। আর চাঁদ রাতে যিনি বা যারা সারা রাত ডিউটি করেন, তাদের অবস্থা ভাবাও কঠিন। কেউ কেউ নামাজ শেষে দেয় নিরুপায় কুম্ভকর্ণের ঘুম। কেউ জোর করে জেগে থাকলেও বিকেলে আবার ডিউটিতে যাওয়ার তীব্র মানসিক চাপে থাকে। অনেক স্টেশনেই ডে-অফ দেয়া হয়, নাইটের আগের দিন, তাই ঈদের দিন নাইট করার পরদিন স্বাভাবিক সময়ে থাকে অফিস।

নতুন পাঞ্জাবি-শাড়ি নিউজরুমে একটা গ্রুপ ফটো তো মাস্ট

ঈদের দিন বৈরি আবহাওয়া থাকলে ভোগান্তিতে পড়ে সবাই। সেখানেও সংবাদকর্মীদের দুর্ভোগের মাত্রাটা একটু বেশিই। কারণ সবাই নতুন পোশাক সামলে, বৃষ্টি-বাদলের সাথে লুকোচুরির চেষ্টা করলেও ক্যামেরা-বুমের তা চলে না। তাকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হয় মোক্ষম সময়টা কার্ডে ধারণ করার। তখন পোশাক-জুতোর ভাবনা অনেকটা আত্মহত্যার সামিল। এক কথায় টেলিভিশন কর্মীর জন্য ঈদ মানে জ্বালা। যে জ্বালা কখনও সহনীয় হয় না। সবচেয়ে সুখময় কল্পনাতেও আসে না, কারও ডিউটি থাকবে না পরের ঈদে!

ছবি সৌজন্য: ফেসবুক