এক সময় আমাদের দেশে চ্যানেল বলতেই ছিল বিটিভি। পছন্দ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের অনুষ্ঠান দেখতে হলে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখতেই হবে। তখন অবশ্য অনুষ্ঠানগুলো কেবল পছন্দ হওয়ার মতোই হতো না, সেগুলো নিয়ে দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো উন্মাদনা কাজ করত। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে, লোকজন রীতিমতো মিছিল করে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
পরে এটিএন বাংলা চালু হলো। তারপর চ্যানেল আই। একুশে টিভি প্রথমে টেরিস্ট্রিয়াল টিভি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, পরে স্যাটেলাইট হয়ে গেল। আর এখন তো বাংলাদেশে এত এত স্যাটেলাইট চ্যানেল, কোন চ্যানেলটা টিভিতে কত নম্বরে আছে, তাও কারো মনে থাকে না।
তবে এখনো ঈদ এলে তাবত দর্শক সেই বিটিভি যুগে প্রবর্তিত কিছু আয়োজনের জন্য ঠিকই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে। ওই অনুষ্ঠানগুলো না দেখলে ঈদটা কেমন যেন অসিদ্ধ থেকে যায়, আধা সেদ্ধ চালের মতো। ঈদে যদি আমজাদ হোসেনের জব্বার আলীর দেখা না পাওয়া যায়, ঈদের পরদিন বাসার সবাই মিলে হানিফ সংকেতের ছন্দে গাঁথা গল্পগাথায় ধাঁধিয়ে দেয়া উপস্থাপনার ইত্যাদি না দেখা হয়, তাহলে কী আর ঈদকে ঈদ মনে হয়!
আমজাদ হোসেন এখনো প্রায় বছরই জব্বার আলীকে নিয়ে ঈদের বিশেষ নাটক বানিয়ে যাচ্ছেন। হাস্যরসাত্মক এই নাটকগুলোয় বিনোদনের মধ্য দিয়ে গুরুতর সব সামাজিক বার্তাও দেন তিনি। সে কাজে যে তিনি বছরের পর বছর বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন, নীতিকথার সাথে যথেষ্ট পরিমাণ বিনোদন গুলিয়ে যথার্থ একটা মিশ্রণ তৈরি করছেন, তা তো জব্বার আলীর জনপ্রিয়তা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। ইদানিং অবশ্য বিটিভির বাইরে অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলের পর্দাতেও জব্বার আলীকে দেখা যাচ্ছে।
আর হানিফ সংকেতও বেঁচে আছেন, বেঁচে আছে তার ইত্যাদিও। প্রতি বছর দুই ঈদের পরের দিন রাতে বিটিভিতে মহাসমারোহে প্রচারিত হয় দেশে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা এই অনুষ্ঠান। এখনো বাড়ির সব মানুষ যাবতীয় কাজ ফেলে আয়োজন করে ইত্যাদি দেখে। ক্রিকেট খেলা ছাড়া বাংলাদেশের ঘরে ঘরে টিভি-কেন্দ্রিক এমন গেট টুগেদার মনে হয় সারা বছরে আর কখনোই হয় না।
তবে দুর্ভাগ্য, হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে নেই। তাই ঈদ এলেই দর্শকরা তার বিশেষ নাটক আর দেখতে পান না। মূল পরিচয় লেখক হলেও, হুমায়ুন আহমেদ নাটক-সিনেমাও কম বানাননি। সে পরিচয়েও তার জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। পরের দিকে প্রতি ঈদ উপলক্ষ্যেই তিনি বিশেষ নাটক বানাতেন। হুমায়ুন আহমেদ নামটাতেই মানুষের বিশেষ দুর্বলতা ছিল, তার বিশেষ নাটক নিয়ে দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তো থাকতোই। বিশেষ করে উইয়ার্ড হিউমার সৃষ্টিতে তিনি যেমন শক্তিশালী ছিলেন, তেমনি সাহসীও ছিলেন।
তবে এবারের ঈদেও যে একদমই নতুন আয়োজন থাকছে না, দর্শকদের জন্য নতুন কোনো চমক অপেক্ষা করছে না, তেমনটিও নয়। গত বছরের তুমুল ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র আয়নাবাজি থেকে, পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বানানো হচ্ছে ঈদ স্পেশাল আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ। আবার বাংলাদেশের টিভি-নাটকের ভাষা বদলে দেয়া ভাই-ব্রাদাররা একাট্টা হয়ে আয়োজন করছেন ছবিয়াল রি–ইউনিয়ন। আর এই দুই আয়োজনের কোনোটাই কেবল ঈদকে সামনে রেখে করা আকস্মিক কোনো পরিকল্পনা নয়। ঈদ ছাড়িয়ে আরো দূরের পরিকল্পনাও আছে তাদের।
মানে, হুমায়ুন আহমেদের বিশেষ নাটকগুলো কেবল স্মৃতি হয়ে থাকলেও, এই ঈদে জব্বার আলী-ইত্যাদির নস্টালজিক স্বাদের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরো কিছু নতুন চমকপ্রদ আয়োজন। কাজেই, এই ঈদে বোকাবাক্সের সঙ্গ নিতান্ত মন্দ হওয়ার কথা নয়।
আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ
ছবিয়াল রি–ইউনিয়ন