একস্লিপ: রুদ্র

বাংলা নামের দেশ ও কবি হিসেবে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বিনির্মাণ ঘটেছে এক অনন্য যূথবদ্ধতায়। জীবৎকালের অস্থির জলপাই রংয়ের রাজনীতি, বহুচর্চিত ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম-অপ্রেমের মাঝে জীবিত কবি-ব্যক্তি রুদ্রর চলন ছিল মুক্তো পুষে রাখা ঝিনুকের মতোই।

পয়ত্রিশ বছরের প্রতিস্পর্ধী জীবনে রুদ্রের হাত ধরে বাংলা কবিতায়, বাংলাদেশের কবিতায় যুক্ত হয়েছে অভিলাসী মনের গন্তব্য। যে মন  চন্দ্র না-পেলেও জোৎস্নায় ঠাঁই খুঁজেছে। সত্তরের শেষে, সেনা শাসনের কালে বাংলাদেশের কবিতায় রাজনীতিকে দ্বান্দ্বিকতার কষ্টিতে মেপেও কালোত্তীর্ণ অজস্র পাঠকপ্রিয় কবিতা লিখেছেন আদ্যন্ত এই ‘শব্দ-শ্রমিক’। ব্যক্তিগত বৈরাগ্য, সুষম কবিতার অন্বেষণ ও সাম্যের লড়াইয়ের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহই লিখেছেন ‘হাজার সিরাজ মরে, হাজার মুজিব মরে/ হাজার তাহের মরে/ বেঁচে থাকে চাটুকার, পা-চাটা কুকুর,/ বেঁচে থাকে ঘুণ পোকা, বেঁচে থাকে সাপ।’

রুদ্রের কাছে কবিতা ছিল সমাজ বদলের হাতিয়ার, এবং তা অবশ্যই শিল্পসমৃদ্ধ আখরে। সামরিক জান্তার দুঃশাসন, জনতন্ত্রের দুর্ভিক্ষের বাংলায় তাই রুদ্রই প্রশ্ন করেছেন ‘দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো— কোন পক্ষে যাবে? একদিকে বিত্তবান,/ অন্যদিকে বিত্তহীন ক্ষুধার্ত মানুষ।/ একদিকে পুঁজিবাদ,/ অন্যদিকে সাম্যবাদী শান্তির সমাজ। ইতিহাস সাক্ষী দ্যাখো, অনিবার্য এ-লড়াই— কোন পক্ষে যাবে?’। রুদ্রই চিনিয়েছেন রাজনীতিবিদদের যাদের ধমনী শিরায়  বয়ে চলে সুবিধাবাদের পাপ।

বাতাসে লাশের গন্ধ পাওয়া রুদ্র লিখেছেন গানও। অসামান্য সেই লিরিকে বলেছেন ভালো থাকবার কথা। তাঁর শব্দেরা দানা বেঁধেছে সম ও ভাবীকালের প্রাণের গহীনে। কোন এক একুশে জুন আকাশের ঠিকানায় পাড়ি জমালেও দ্রোহী রুদ্র রয়েছেন, থাকবেন সাম্যের সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখা প্রত্যেকের অন্তরে অন্তরে।