ফেসবুকে নিজের দেওয়া প্রথমদিকের স্ট্যাটাস কিংবা পোস্ট যদি কোনো উপলক্ষ্যে, হোক না সে মেমরিজ নোটিফিকেশনের সুবাদে দেখা পড়ে—বেশ অবাক লাগতে পারে। হয়ত ভাববেন, কি ছেলেমানুষটাই না ছিলাম!
ফেসবুকের কথা কেন এলো? এ লেখা তো ফেসবুকের ফিচার নিয়ে নয়, তবে এ লেখা স্মৃতি নিয়ে। আমাদের ফেলে আসা এক দুর্দান্ত সময়, দুর্দান্ত স্মৃতি। মেমরি নোটিফিকেশনে স্মৃতি হাতড়ানোর অভ্যেস থেকে পুরো অন্য সীমান্তে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকা এক অনুষ্ঠানের গল্প। তবে ফেসবুকের রেফারেন্স দিতে হচ্ছে, কারণ বিস্মৃতিতে প্রায় হারাতে বসা এই ট্রেজারের সন্ধান শেষকালে ফেসবুকেই জম্পেশ হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচারিত এক অনুষ্ঠান নিয়েই এই গপ্পো ফেঁদে বসা। অনুষ্ঠানটির নাম—জলসা।
ইউটিউব হোক বা ফেসবুক কিংবা মোটাদাগে ইন্টারনেট, এসবের কল্যাণে এখন তো সব অনুষ্ঠানকেই ‘ভিডিও কনটেন্ট’ বলতে দোষ নেই। ঘরে বসে নিজেই কনটেন্ট তৈরি করা আর সেলিব্রিটি হয়ে ওঠা এখন অকল্পনীয় নয়, বাস্তবে অনেকে হয়েছেন অলরেডি। তবে এটা যে সময়ের কথা, তখন কোনো কিছু সৃষ্টি হোক কিংবা প্রতিষ্ঠা, তার জন্য দেদার কাঠখড় পোড়াতে হতো। প্রজন্ম ভার্সেস প্রজন্মের দ্বন্দ্ব তখন আরো জমজমাট। তেমন সময়েই উপভোগ্য, সাহসী আর ভীষণ ভাবনার খোরাক জুটিয়ে দেওয়া এক গানের অনুষ্ঠান হলো। সে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন আনিসুল হক (ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মেয়র আনিসুল হকের কথাই বলছি)। সেরা শিল্পী আর কিংবদন্তীদের এক জমায়েতে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিক (এখনো বটে) কিছু তর্কেরও সঞ্চালনা করেছিলেন তিনি এই ‘জলসা’য়।
এই সময়টায় ব্যান্ড সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা যখন তুমুল, তখন সেটা নিয়ে প্রজন্ম বনাম প্রজন্মের বাহাসও জমজমাট। এমন গান কি আমাদের সঙ্গে মানায়? যারা গাচ্ছেন, এভাবে গাচ্ছেন, সেটা ঠিক না বেঠিক হচ্ছে—তর্ক তা নিয়েও। আমাদের ব্যান্ড লিজেন্ডরা সেদিন কেবল পারফর্মই করেননি, প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন, কিংবদন্তীদের যুক্তি-তর্কও হয়েছে সেদিন।
তবে মূল চমক কিন্তু পারফরম্যান্সেই। সাদিয়া আফরিন মল্লিক গেয়েছিলেন মাইলসের জনপ্রিয় একটি গান, লিজেন্ড শাফিন আহমেদের কন্ঠে নজরুল সঙ্গীত, পার্থ বড়ুয়া গাইলেন ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’, আরও কত চমক! সুবীর নন্দী যে পপ গানে কম যান না, তার প্রমাণই দিয়েছেন এই অনুষ্ঠানে। দুই ঘরানার শিল্পীরা নিজেদের ঘরানা রেখে গান গেয়েছিলেন অন্য ঘরানার। আর সে যে কী জমজমাট হয়েছিল, তা না শুনলে না দেখলে বলে শেষ করার নয়।
এমন অভিনব ‘কনটেন্ট’ সে যুগে হয়েছে, ভাবতেও একটু অবাক লাগে। জলসার সেই জৌলুস কি এত বছরের পরিক্রমায় ধরে রাখা গেল?
সে আলাপ অন্য সময়ের জন্য থাকুক, এখন ছুটির দিনে উপভোগ করুন সেই ‘জলসা’!