জেমস বন্ড আসলে কেমন?
এই প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা রূপালি জগতের নিকেশে এসেছে বারবার। পৌরুষদীপ্ত ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্ট জেমস বন্ডের চরিত্রে একে একে এসেছেন শন কনারি, রজার মুর, টিমোথি ডাল্টন, পিয়ার্স ব্রসন্যান বা হালযুগে ড্যানিয়েল ক্রেইগের মতো তারকারা। 007 কোড বয়ে চলা বন্ড চরিত্রে তাদের উপস্থাপনা নিয়ে যখনই তুলনা এসেছে, তখনই এসেছে এই প্রশ্ন।
অভিনয় দক্ষতা কিংবা পারফরম্যান্সের নিক্তিতে এদের যে কেউই দিব্যি উতরে যাওয়ার মতো তারকা। তবে ‘সেরা’ বন্ড কে—এই চির-অমীমাংসিত প্রশ্নে যদি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে এক হিসেবে রজার মুরকে সবার উপরে রাখতে পারেন চাইলেই। হিসেবটা হলো, তিনি আসলে তেমনটাই ছিলেন বা তেমনভাবেই রূপালি পর্দায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন; ঠিক যেমনটি হলেন ইয়ান ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ড।
এ নিয়ে তারপরেও বাহাস চলতে পারে, চলবে। তবে সদ্য-প্রয়াত স্যার রজার মুরকে কেন সেরা জেমস বন্ড বলতে পারেন, তার আরও কিছু কারণ নিয়ে আলাপ হোক।
১. আগে থেকেই বন্ড!
’লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’ ছবিতে আবির্ভাবের ৯ বছর আগেই জেমস বন্ড চরিত্রে হাজির হয়েছিলেন মুর। ব্রিটিশ টেলিভিশন সিরিজ ’মেইনলি মিলিসেন্ট’-এর একটি পর্বে তিনি উপস্থিত হন জেমস বন্ডের ভূমিকায়!
২. সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি
জেমস বন্ডের প্রধান শত্রু হিসেবে আর্নস্ট স্ত্রাভো ব্লোফেল্ডকে ধরতে পারেন, তবে রূপালি পর্দায় বন্ডের শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী নিঃসন্দেহে ’ফান্সিসকো স্কারামাঙ্গা’ ওরফে ’পিস্তল স্কারামাঙ্গা’, ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’ ছবিতে যে চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা ক্রিস্টোফার লি। এমন খতরনাক আদমির সঙ্গে লড়াই করার ‘সৌভাগ্য’ কিন্তু মুরের কপালেই ছিল!
৩. নারী-প্রীতি!
আদপেই জেমস বন্ড ধোয়া তুলসী পাতা নন! নারীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণ এই চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে নারীদের জন্য অমোঘ আকর্ষণ আর যেকোনোভাবে তাকে একান্তে কাছে পাওয়ার সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন রজার মুর। এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপে না গিয়ে মুরের অভিনীত বন্ড ছবিগুলোই দেখে ফেলুন!
৪. দুর্দান্ত স্টান্ট
রজার মুর যে যুগে অভিনয় করেছিলেন, তখনকার স্টান্ট দৃশ্যগুলোয় প্রযুক্তির সহায়তা যে এখনকার মতো পাওয়া যেত না, সে বলাই বাহুল্য। এই হিসেব মাথায় রাখলে বন্ডের সেরা স্টান্টগুলো তার অভিনীত ছবিগুলোতেই মিলবে বটে। উদাহরণ হিসেবে ‘লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’, ‘মুনরেকার’, ’দ্য স্পাই হু লাভড মি’ দেখে নিন।
৫. হালকা চালের মানুষ
পৌরুষের শো-অফ যতই থাকুক, জেমস বন্ড হিসেবে কখনোই খুব ‘সিরিয়াস’ চেহারা নিয়ে হাজির হননি মুর। হাসিখুশি আবির্ভাব, চটুল কৌতুক আর মশকরা সব সময়ই তিনি করেছেন সাবলীলভাবে; যা জেমস বন্ডের চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক বটে!
৬. পরোয়া নেই একদম!
এখনকার সবাই জেমস বন্ডের ‘সিক্স-প্যাক ফিগার’ দেখেছেন ড্যানিয়েল ক্রেইগের কল্যাণে। তবে পর্দায় সম্ভবত নিজের শরীরের সবচেয়ে বেপরোয়া প্রদর্শন করেছেন রজার মুর, কারণ তিনি ব্যায়ামহীন আর কিছুটা থলথলে শরীর নিয়ে বুড়ো বয়সেও দিব্যি খালি গায়ে হাজির হয়েছেন বন্ড চরিত্রে। এমন ’বেপরোয়া’ প্রদর্শনের জন্য দরকারি ব্যক্তিত্বটা তিনি যে দারুণভাবে ‘ক্যারি’ করতেন, তা তো আর বলা লাগে না।
স্যার রজার মুর দেখিয়েছিলেন জেমস বন্ড চরিত্রের এমন কিছু রূপ, যা অন্য সব বন্ডেরা দেখাতে পারেননি; উইথ ডিউ রেসপেক্ট। এর কারণ আর কিছুই নয়, রজার মুর বন্ডের এই আমুদে আর হাসিখুশি দিকটা ব্যক্তিজীবনেও বহন করতেন সব সময়।
সদ্য প্রয়াত এই কিংবদন্তীর জন্য অশেষ শ্রদ্ধা।
লেখা ও ছবির সূত্র : লেজার টাইম পডকাস্ট