এখন যারা মাছরাঙা টেলিভিশনে টিপু সুলতানের বীররসের সাথে পরিচিত হচ্ছেন তারা হয়ত অনেকেই জানেন না নব্বইয়ের দশকের সোনালি সময়ে বিটিভিতে প্রচারিত হত মেগা সিরিয়াল ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’। ‘মৈসোরের বাঘ’ খ্যাত এই শাসক সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক হিসেবেই উপমহাদেশের ইতিহাসে স্থান করে রেখেছেন। ১৭৮২ সাল থেকে শুরু করে ১৭৯৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মৈসোর/মহীশুর শাসন করেন। শাসক এবং যোদ্ধা হিসেবে তাঁর পরিচয় সকলে জানলেও, তবে আরও কিছু বিচিত্র দিক ছিল বটে টিপুর। টিপু সুলতানের বেশ কিছু অজানা বিষয় নিয়েই এই আয়োজন।
১. টিপু সুলতান ছিলেন হায়দার আলি এবং ফাতিমা ফখর উন নিসার সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ফতেহ আলি, তবে স্থানীয় দরবেশ টিপু মাস্তান আউলিয়ার নাম থেকেই তাঁকে ‘টিপু’ বলে ডাকা হতো, যে নামে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন পরে। তাঁর পুরো নাম সুলতান ফতেহ আলি খান সাহাব।
২. টিপু সুলতান ছিলেন সেই সময়ে ব্রিটিশদের কাছে সবচেয়ে ভীতিকর! তিনি যখন মারা যান, রীতিমতো উৎসবের ধুম পড়েছিল ব্রিটেনে। লেখক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পীরা টিপুর মৃত্যু উদযাপনের জন্য নতুন কাজও করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় উইকি কলিন্সের ‘দ্য মুনস্টোন’ উপন্যাসের কথা। এর শুরুই হয়েছে টিপুর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনে লুটপাট এবং দখলের বিবরণ দিয়ে
৩. টিপুকে ভারতের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ব্রিটিশরা ভারতের জন্য কতটা বিপদজনক হয়ে উঠছে। ব্রিটিশদের উৎখাতের জন্য তিনি লড়েছিলেন চার-চারটি যুদ্ধ।
৪. অটোমান এবং ফরাসি শাসকদের কাছে টিপু নিজের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের উৎখাতের জন্য ফরাসি এবং অটোমানদের সঙ্গে জোট বেঁধে যুদ্ধ করা।
৫. পশ্চিমা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বেশ ভক্ত ছিলেন টিপু সুলতান। বন্দুক বানানেওয়ালা, প্রকৌশলী, ঘড়ি নির্মাতা এবং আরও বেশ কিছু প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষ লোকদের তিনি নিয়ে এসেছিলেন সুদূর ফ্লান্স থেকে। এর পর তিনি নিজের উদ্যোগে কামান, গোলাবারুদ এবং বন্দুক তৈরি করেন। যুদ্ধে তাঁর কামান তথা রকেট দাগানোর বিষয়টি ছিল অভিনব। ভারতে রকেট প্রযুক্তি ব্যবহারের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনিই!
৬. বাঘের প্রতীকটি তিনি বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছেন বিপুলভাবে। নিজের শক্তির প্রদর্শনের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন বাঘের প্রতীকী প্রদর্শন। তাঁর স্বর্ণখচিত সিংহাসন, পোশাক, মুদ্রা, তলোয়ার এবং সৈন্যদের ইউনিফর্মে তিনি বাঘের প্রতীক ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া তিনি সূর্যের প্রতীকটিও ব্যবহার করেছেন সব সময়।
৭. স্বপ্নের ওপর অনেক নির্ভর করতেন টিপু। নিজের স্বপ্ন বিষয়ে তিনি ‘খোয়াবনামা’ নামের একটি বই লেখেন, যাতে তার নিজের স্বপ্নগুলোর বিবরণ তিনি লিখেছেন বিভিন্ন সময়ে। যুদ্ধের বিষয়েও তিনি বিভিন্ন স্বপ্ন থেকে পাওয়া সংকেতকে গুরুত্ব দিতেন।
৮. টিপু সুলতান বেশ কিছু মন্দিরের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শ্রীরঙ্গপত্তনে নিজের প্রাসাদের সামনে শ্রী রঙ্গনাথ মন্দির, শ্রীঙ্গারি মঠ ছিল এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৯. ডাকাবুকো যোদ্ধা ও শাসক হলেও বাগান করার কাজে দারুণ আগ্রহ ছিল টিপুর!
১০. টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর তাঁর তলোয়ার এবং আংটি ব্রিটিশ সৈন্যরা ছিনিয়ে নেয়। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা ছিল। এরপর ভারতের ধনকুবের বিজয় মল্ল এটি কিনে নেন।
লেখা ও ছবির সূত্র- স্ক্রল, ইন্ডিয়া টুডে