শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শিল্পীরা আমাদের উপহার দিয়েছেন অসামান্য সব মাধ্যমে সম্পন্ন করা শিল্পকর্ম। ভাস্কর্য এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি নান্দনিক মাধ্যম। পাথুরে গাঁথুনির অবয়বে, নিশ্চল ভাস্কর্যও সব সময় মুখর আর প্রাণবন্ত।
নারী অবয়ব ভাস্কর্যতে এসেছে নানা রুপে। পৌরাণিক চরিত্র কিংবা সাধারণ কোনো নারীর প্রতিকৃতিতে, ভাস্কর্যে প্রকাশ পেয়েছে নারীর অজস্র মাত্রা। কখনো কোমল, কখনো কঠোর, কখনো প্রেম, কখনো কামনা ছাড়িয়েও কখনো ন্যায়বিচারের অটল প্রতিকৃতি হয়ে উঠেছে নারী ভাস্কর্য। পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু নারী ভাস্কর্যের বিবরণ থাকছে এই আয়োজনে।
১. সাভানা বার্ড গার্ল
‘বার্ড গার্ল’ নামেই এই ভাস্কর্যটি পরিচিত। ১৯৩৬ সালে ভাস্কর সিলভিয়া শ জুডসন এটি নির্মাণ করেন। ইলিনয়ের লেক ফরেস্ট এলাকায় এর দেখা মেলে। ১৯৯৪ সালে ‘মিডনাইট ইন দ্য গার্ডেন অব গুড অ্যান্ড এভিল’ উপন্যাসের প্রচ্ছদে স্থান তৈরি করে নেওয়ার পর খুবই আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্রোঞ্জে গড়া প্রায় সাড়ে চার ফুট আকৃতির এই ভাস্কর্য।
২. দ্য কিস
১৮৮৯ সালে বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর অগাস্ত রোদ্যাঁ নির্মাণ করেন ‘দ্য কিস’ নামের এই ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যর পেছনে রয়েছে চিত্তাকর্ষক এক গল্প। ত্রয়োদশ শতকের এক ইতালীয় নারী, যার আখ্যান রয়েছে দান্তের ‘ইনফার্নো’তে, তাকে্ই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ভাস্কর্যতে। এই নারী তার স্বামীর ছোটভাইয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। তাদেরকে একসঙ্গে আবিষ্কারের পর নারীটির স্বামী দুজনকেই হত্যা করেন।
৩. লেডি জাস্টিস
লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য পুরো পৃথিবীতেই অতি-পরিচিত, বিখ্যাত এবং বহুল ব্যবহৃত। মজার বিষয় হচ্ছে, এই ভাস্কর্যটির স্রষ্টা হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো শিল্পীকে ক্রেডিট দেওয়ার উপায় নেই! পৃথিবীর অজস্র আদালত প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে বিভিন্নরূপে এই ভাস্কর্যটির দেখা মেলে। ‘স্কেলস অব জাস্টিস’, ‘ব্লাইন্ড জাস্টিস’ বা আরও কিছু নামকরণ থাকলেও এটি ‘লেডি জাস্টিস’ নামেই সচরাচর পরিচিত।
৪. পিয়েতা
পিয়েতায় ফুটে উঠেছে একমাত্র পুত্র যীশুকে কোলে নেওয়া কুমারী মাতা মেরির অবয়ব। বিখ্যাত ভাস্কর মিকেল্যাঞ্জেলো এই ভাস্কর্যটি যখন তৈরি করেন, তখন তিনি একেবারেই পরিচিত ছিলেন না। তার বয়সও তখন মোটে বিশের কোঠায়। তবে এই তরুণ শিল্পী মাত্র বছর দুয়েকের মধ্যেই এই অনন্য ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৫. ভেনাস ডি মিলো
আনুমানিকভাবে বলা হয়, এই ভাস্কর্যটি খিস্টপূর্ব ১৩০ শতকের সময়ের। ধারণা করা হয় যে গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ভালোবাসা এবং কামনার দেবী আফ্রোদিতিকে (রোমানরা যাকে ‘ভেনাস’ বলে থাকে) ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ভাস্কর্যতে। মার্বেলে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির আকৃতি ২০৩ সেন্টিমিটার বা পৌনে সাত ফুট। এর হাতের দিকের কিছুটা অংশ হারিয়ে গিয়েছে। ধারণা করা হয় যে এটি আলেজান্দ্রোস অব অ্যান্টিয়োকের নির্মাণ করা। অবশ্য এর আগে ভুলবশত এটি বিখ্যাত ভাস্কর প্রাক্সিটেলসের নির্মাণ করা বলে মনে করা হতো। প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে রয়েছে এই ভাস্কর্যটি। জানলে অবাক হবেন, এই ভাস্কর্যটি খুজে পাওয়া গিয়েছিল এক কৃষকের ক্ষেতে!
লেখা ও ছবির সূত্র: লিস্টভার্স