দেশ ঘুরে তবেই লোকে বিদেশ যায়। এক্ষেত্রে হলো উল্টো। বিদেশের সেরা দশ বিজ্ঞাপনের ফিরিস্তি শেষে এবার নজর দেশের দিকে। তবে একে ঠিক সে অর্থে সেরা দশের তালিকা বলা যাবে না। কমিউনিকেশন ম্যাসেজের যথাযথ ডেলিভারি, ব্র্যান্ডিং, নির্মাণ, স্বাতন্ত্র্য এবং সর্বোপরি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার মানদণ্ডে সীমিত পরিসরে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে দশটি বিজ্ঞাপনকে আলাদা করা হয়েছে। এর বাইরেও আরো অনেক প্রশংসনীয় কাজ শুধুমাত্র ‘দশটি এন্ট্রিকেই জায়গা দিতে হবে’ শর্তে তালিকায় ঠাঁই পায়নি। এরপরও সমালোচনা-বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে, নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের বিজ্ঞাপনশিল্প যেভাবে বাকিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে, তাতে এই অদম্য অগ্রযাত্রাকে স্বীকার করার স্বার্থে কিছু ছাড় দেয়াই যায়। এই দশটি বিজ্ঞাপন আমাদের বিজ্ঞাপনশিল্পের অগ্রযাত্রারই অগ্রণী প্রতিনিধি। সেগুলো দেখে নেয়ার আগে যথারীতি, দেশের এ শিল্পের সাথে জড়িত সকলকে সংগ্রামী স্যালুট!
বাংলালিংক: ‘স্বাধীনতা দিবস-একা কি আর ভালো থাকা যায়’; এজেন্সি: আই পজিটিভ কমিউনিকেশন্স
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুত্রের চাকরি পাওয়ার খবরে পাড়ার সবার প্রশংসায় সিক্ত পিতা নিজে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বিষয়টা। পুত্র যে প্রবাসী-বিলাসী জীবনের মোহে অবজ্ঞা করছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি। সেই দেশ, যে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে পুত্রের দাদা আর ঘরে ফিরে আসেননি। পুত্রের বিদেশযাত্রা পিতার মেনে না নেয়ার বিষয়টি থেকে কীভাবে পুত্রের বোধোদয় হলো, সে গল্প নিয়েই বিজ্ঞাপন মুভিটি।
রবি: রমজান ২০১৬; এজেন্সি: অ্যাডকম লিমিটেড
হাউজিংয়ের বাচ্চারা মিলে ইন্টারনেট কাজে লাগিয়ে নিজেরাই তৈরি করে এক সুইট সারপ্রাইজ। শুধু দেশেই না, দেশের বাইরেও বেশকিছু পোর্টালে প্রশংসিত হয়েছে রমজানের স্পিরিট নিয়ে নির্মিত এই কমার্শিয়াল।
গ্রামীণফোন: একাত্তরের কথা, বিজয় দিবস ২০১৬; এজেন্সি: গ্রে ঢাকা
বিশেষ উপলক্ষ্য নিয়ে আরেকটি কমার্শিয়াল, এবং সেটাও আরো একটি ‘টেল্-কো’র বদান্যতায়। দেশের বিজ্ঞাপনের গতিচিত্র বদলে দিতে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর যে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে তা অস্বীকারের জো নেই। গ্রে-ঢাকার পক্ষ থেকে তেমনই একটি বড় ক্যানভাসের ক্যাম্পেইন। আর মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় ক্যানভাস কী-ই বা আছে!
জুঁই: রি–লঞ্চ, ‘এক চুলও ছাড় নয়’; এজেন্সি: সান কমিউনিকেশন্স
রোমান্সের সাথে দীর্ঘদিনের অ্যাসোসিয়েশন ভেঙে গত বছরই বেশ বোল্ড আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘জুঁই’ ব্র্যান্ডের। ছোটো শহর থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীতে পা রাখা এক তরুণীর পদে পদে সংগ্রাম, হোঁচট খাওয়ার পরও কোনোকিছুতে আপোশ না করার সংকল্প নিয়ে এর গল্প। গতবছরের বেশ আলোচিত এ ক্যাম্পেইনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েই এ বছর ব্র্যান্ডটির পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে তুমুল প্রশংসিত নারী দিবসের বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছে সান কমিউনিকেশন্সল। আগামী বছর এমন তালিকায় বিজ্ঞাপনটির থাকা এখনই একরকম নিশ্চিত।
কিউট: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল
যতো যাই বলুন, আমাদের নারী ক্রিকেট দলটি প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধায় বেশ পিছিয়েই আছে। আমরা শুধু সালমা-জাহানারাদের মাঠেই লড়তে দেখে হাততালি দেই। অথচ তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় বাছাই থেকে শুরু করে খেলা চালিয়ে যাবার তাদের জোর প্রত্যয় বারবার বাধাগ্রস্থ হয়। কিউট-এর ব্যানারে উইমেনস ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির মৌসুমে নির্মিত বিজ্ঞাপনে উঠে এসেছে তাদের মাঠের বাইরের সে লড়াই। বলতে ভুলে গেছি, দলটির স্পন্সরও ছিলো ‘কিউট’।
আলট্রা মেন্টোস্: লঞ্চ; এজেন্সি: অগিলভি বাংলাদেশ
কনসেপ্ট আর নির্মাণের জায়গা থেকে বেশ ফ্রেশ অ্যাপ্রোচ। অনেক আগে থেকেই দেশের বাজারে থাকা প্রচলিত মেন্টোস্ থেকে নতুন ‘আলট্রা মেন্টোস্’ আকারে খানিক বড়। এই ‘বড়’ দেখানোর ব্যাপারটিরই মজার ক্রিয়েটিভ ইন্টারপ্রেটেশন করা হয়েছে এই সিরিজ ক্যাম্পেইনে।
রবি: ফ্রি ওয়াই–ফাই স্পট; এজেন্সি: বিটপী লিও বার্নেট
জিংগেল, সেট আর কমিকাল টুইস্ট মিলিয়ে আরেকটি ফ্রেশ প্রেজেন্টেশন। বিটপী’র ঘর থেকে ‘রবি ইয়োন্ডার’ ক্যাম্পেইন বেশ ঘটা করে নামলেও ফ্রি ওয়াইফাই স্পটের এই কমার্শিয়ালটি দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতায় বেশি এগিয়ে ছিলো। সূক্ষ্ম হিউমারের ঘাড়ে চড়ে কমিউনিকেশন ম্যাসেজটাও পরিষ্কার।
প্যান্থার কনডম: হ্যাপি ওয়াইফ; এজেন্সি: মিডিয়াকম লিমিটেড
এর আগের সুপার-ডুপার হিট ‘আসল পুরুষ’ ক্যাম্পেইনের সিক্যুয়েল বলা চলে এটিকে। আর পরের এই পর্ব একেবারেই আশাহত করেনি। কমার্শিয়ালের ‘বাবুর জন্য না, ওর বাবার জন্য’ লাইনটা ছিলো গতবছর বিজ্ঞাপনের সুবাদে জনপ্রিয়তা পাওয়া গুটিকয়েক বাক্যের একটি।
ইস্পাহানি টি: এফোর্ডোবেল প্যাক; এজেন্সি: অ্যাডকম লিমিটেড
খুব ক্রিয়েটিভ নয়, বরং স্লাইস অব লাইফে ভরপুর একটি ‘ফিল গুড’ টিভিসি। মন্টাজ স্টাইলে কয়েকটি ছোটো, কিন্তু পরিচিত গল্পে ইস্পাহানি চায়ের এই বিজ্ঞাপনটি সাজিয়েছিলো অ্যাডকম। সবার জন্য এফোর্ডেবল, সবার জন্য বোধগম্য।
ব্লেজ এলইডি লাইট: লঞ্চ ক্যাম্পেইন; এজেন্সি: গ্রে ঢাকা
ঝাপসা আলোয় অনেক গল্পই আড়ালে রয়ে যায়। হারিয়ে যায় ছোটো ছোটো সুখের মুহূর্তগুলো। তবে ওই মুহূর্তগুলোই আলো পেলে কেমন করে আরো উজ্জ্বল করে তোলে জীবন, ব্লেজ এলইডি লাইটের প্রথম টেলিভিশন কমার্শিয়ালে এমনই ক’টা গল্পের দেখা মেলে।