শাবানা : উত্থান থেকে প্রস্থান

শাবানা। এক সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন ঢাকার চলচ্চিত্রে। তারপর ২০০০ সালে হঠাৎ করেই ছেড়ে যান চলচ্চিত্রাঙ্গন। সপরিবারে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ১৭ বছর ধরে তিনি চলচ্চিত্র জগত থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। মাঝে বেশ কয়েক বার দেশে এলেও, দেখা করেননি এ জগতের কারোর সঙ্গে।

অবশ্য সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এই বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সম্প্রতি ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে শাবানাকে। আর ২৫ মে এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে ওরা এগারো জন চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দেবেন বলেও কথা দিয়েছেন শাবানা।

এসব মিলিয়ে দীর্ঘ সতের বছরের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার পরে, চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে আবার শাবানার যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘদিন পরে আবারও দর্শকরা তাদের প্রিয় এই অভিনেত্রীকে চাক্ষুষ দেখার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। তার আগে ছোট্ট করে মনে করে নেয়া যেতে পারে নায়িকা হিসেবে শাবানার উত্থানের গল্প।

শাবানার চলচ্চিত্রযাত্রার শুরু হয় ষাটের দশকে, পরিচালক আজিজুর রহমানের হাত ধরে। তখন আজিজুর রহমান এহতেশামের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এহতেশামের হারানো সুর (১৯৬২) চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিষেক হয় শাবানার। এহতেশামই তার শাবানা নাম দেন। তার পারিবারিক নাম ছিল আফরোজা সুলতানা রত্না

আবার বনবাসে রূপবান (১৯৬৬) চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন শাবানা

১৯৬৬ সালে শাবানা ইবনে মিজানের আবার বনবাসে রূপবান চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে, এবং পরের বছর মুক্তি পাওয়া এহতেশামের চকোরী (১৯৬৭) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। চকোরী-র মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি নায়ক নাদিমের সাথে তার জুটিও জমে ওঠে। এরপর তারা জুটি বেঁধে অভিনয় করেন কুলি (১৯৬৭), ছোটে সাহেব (১৯৬৭), চাঁদ অর চাঁদনী (১৯৬৮), দাগ (১৯৬৯), আনাড়ি (১৯৬৯) চলচ্চিত্রগুলোতে। এগুলোর মধ্য দিয়ে দুই পাকিস্তানেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শাবানা।

চকোরী (১৯৬৭) চলচ্চিত্র দিয়ে নাদিমের সঙ্গে শাবানার জুটি জমে ওঠে

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম যে চলচ্চিত্রটি শুটিং করে মুক্তি দেয়া হয়, সেটি ছিল চাষী নজরুল ইসলামের ওরা ১১ জন। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেন শাবানা। ১৯৭২ সালে এই চলচ্চিত্রটিসহ শাবানার আধ ডজনেরও বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এর মধ্যে ছিল কাজী জহিরের অবুঝ মন। এই দুই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও নিজের জায়গা পাকা করে নেন শাবানা।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন-এ (১৯৭২) অভিনয় করেন শাবানা

১৯৭৭ সালে শাবানা অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র দেওয়ান নজরুলের দোস্ত দুশমন। ভারতীয় চলচ্চিত্র শোলের ছায়াবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে চুমকি চরিত্রে অভিনয় করেন শাবানা, যাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া হয়- চুমকি চলেছে একা পথে

চুমকি চলেছে একা পথের চুমকিও ছিলেন শাবানা (দোস্ত দুশমন, ১৯৭৭)

একই বছরে বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। প্রথম বারেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন শাবানা। তবে নায়িকা হিসেবে নয়, পার্শ্বঅভিনেত্রী হিসেবে, জননী চলচ্চিত্রের জন্য। এরপর অবশ্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার জিতেছেন ৯ বার- ১৯৮০ সালে সখি তুমি কার,’ ৮২ সালে দুই পয়সার আলতা, ’৮৩ সালে নাজমা, ’৮৪ সালে ভাত দে, ’৮৭ সালে অপেক্ষা, ’৮৯ সালে রাঙা ভাবী, ’৯০ সালে মরণের পরে ও ’৯১ সালে অচেনা চলচ্চিত্রের জন্য।

নিজের প্রোডাকশন হাউজের ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৪ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান

এরপর তিনি আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন সম্প্রতি ঘোষিত ২০১৫ সালে, আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিতে। অবশ্য এর বহু আগেই, ২০০০ সালে তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গন ছেড়ে গেছেন। সে বছর মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ঘরে ঘরে যুদ্ধ