রবীন্দ্রনাথ বাঙালির কিংবা আরও সহজ ভাষায় বললে বাংলা, রবীন্দ্রনাথের। তাঁর রচিত প্রতিটি চরণ, জীবনের প্রতিটি আচরণ বাঙালির জন্য অনিঃশেষ এক আলোর উৎস।
আমাদের প্রাণ, ভাষা, চেতনার মর্মমূল নিহিত রবীন্দ্রনাথের মাঝে। তাঁর গানে, বাণীতে ভাষা হিসেবে বাঙলা পেয়েছে নিজস্বতা, জাতি হিসেবে বাঙালি পেয়েছে স্বকীয়তা। কবিগুরুর ১৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা বেছে নিতে চেয়েছি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা আমাদের পছন্দের গ্রন্থগুলোকে। আমাদের মনীষাকে এখনও কিভাবে চালিত করে চলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে তালিকার প্রতিটি ভুক্তি।
১. রবীন্দ্রনাথ
সম্পাদনা: আনিসুজ্জামান
১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে ঘিরে পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে আসে এক বড় ধরনের পরিবর্তন। স্বৈরাচারী পশ্চিম পাকিস্তানি ভাবধারাকে নাকচ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি। ১৯৬৭ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সরকারি প্রচার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার প্রচার বন্ধের পাঁয়তারা করে পাকিস্তানি স্বৈরাচার আইয়ুব খান। যার প্রতিবাদে ঢাকায় পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখ আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের সূচনা ঘটে।
সেই আন্দোলনের অলিখিত মুখপত্র আকারে আত্মপ্রকাশ করে আনিসুজ্জামান সম্পাদিত ‘রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থটি। প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালের বাইশে শ্রাবণ। যাতে রবীন্দ্রনাথের বিপুল সৃষ্টির বিভিন্ন রূপ নিয়ে লিখেছিলেন প্রবীণ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে নবীন আহমদ ছফা পর্যন্ত সকলেই। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মোহাম্মদ ওহিদউল্লাহ’র উদ্যোগে ষ্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে।
২. রবীন্দ্রনাথ: কালি ও কলমে
সম্পাদনা: আবুল হাসনাত
সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম –এ রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহের সংকলন। রবীন্দ্র ভাবাকাশের বহুমাত্রিক উন্মোচন ঘটেছে স্বস্ব ক্ষেত্রে তন্নিষ্ঠ গবেষকদের রচনায়। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি সংস্কৃতিতে তাঁর জীবনব্যাপী সাধনার দ্বারা যে গহন ও গভীর বোধে উজ্জীবনী বিভাব সৃষ্টি করেছিলেন তার প্রামান্য আলেখ্য এই গ্রন্থ।
৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হুমায়ূন কবির
অনুবাদ-ভূমিকা-টীকা: হায়াৎ মামুদ
রবীন্দ্র্র-জন্মশতবর্ষে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন কবির। বিশ্বপটভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধনা ও কীর্তিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তাঁর প্রবাদতুল্য মণীষার সৃজনে। সে-ভাষণ প্রকাশিত হয় Rabindranath Tagore শিরোনামে ১৯৬২ সালে। বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সৃজনপ্রতিভার সর্বাঙ্গীণ অথচ নির্মেদ এই দীপ্র-তীক্ষ্ন ভাষ্যের অসামান্য ভাষান্তর করেছেন হায়াৎ মামুদ।
৪. রবীন্দ্রবাক্যে
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
রবীন্দ্রজীবন ও রচনার বর্ণনানুক্রমিক অন্যতম বৃহৎ সংকলন। রবীন্দ্রনাথের বিপুল রচনাসম্ভার থেকে সুচয়িত হয়েছে অজস্র বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকৃত চিত্তাকর্ষক বিবিধ সংজ্ঞা ও কিছু বিষয়ে মতান্তরও। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও গবেষক হিসেবে প্রবাদপ্রতিম খ্যাতির অধিকারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের দীর্ঘ শ্রম সঞ্জাত এ গ্রন্থ পাঠকমাত্রেই সংগ্রহযোগ্য।
৫. রবীন্দ্রনাথঃ ফিরে দেখা
সনৎকুমার সাহা
রবীন্দ্র-জন্মের দেড়শো বছর পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন অর্থনীতিবিদ সনৎকুমার সাহা। একটু নিবিড়ভাবে, কতটা জীবনের সাথে মিশে আছেন বিশ্বকবি তারই এক ব্যক্তিগত এবং একই সাথে অসম্ভব দূরদৃষ্টি সঞ্জাত বয়ান।