আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস। দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যত বেশি তথ্য তত বেশি প্রভাব’। কারন পৃথিবীর সবথেকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে এখন আর তেলকে গণ্য করা হয় না। তথ্যই সবচেয়ে মূল্যবান। সেজন্যেই চলতি বছরের সিকি ভাগেই অ্যালফাবেট, ফেসবুক, অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের মতো তথ্যসর্বস্ব কোম্পানীগুলো লাভ করেছে ২০১ কোটি টাকা (২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বোঝাই যায় ব্যক্তিগত তথ্য পুঁজি করেই এতবড় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে তারা। এই মূল্যবান সম্পদের দিকে কড়া নজর অপরাধীদের। সেজন্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে ৮টি তথ্য সবার সাথে শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
১. জন্ম তারিখ
নিজের জন্ম তারিখ ফেসবুকে উন্মুক্ত রাখা অনিরাপদ। জন্ম তারিখ থেকেই অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন হ্যাকারা। অথবা যেকোনো শত্রু এই বিশেষ দিনে টার্গেট করে আপনার ওপর হামলা চালাতে পারে।
২. শিশু কোথায় পড়াশুনা করে
গত কয়েক বছরের যৌন ও শিশু বিষয়ক অপরাধগুলো গবেষণা করে ইংল্যান্ডের শিশু বিষয়ক সংস্থা এনএসপিসিসি জানায়, অধিকাংশ অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অসচেতন ছিলেন। এজন্য অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে। অথচ অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে অবেগাপ্লুত হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। সেইসঙ্গে স্ট্যাটাসে জানিয়ে দেন, তার শিশু কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে। এটি শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। এতে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।
৩. শিশুর ছবি
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে যেকোনো তথ্য পাবলিকের কাছে শেয়ার করার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যদিও অনেকেই শিশুদের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে। দেখা গেল, শত্রুরা আপানার শিশুকে চিনে রাখলো। এরপর সুযোগ বুঝে শিশুটিকে অপহরণ করলো।’
৪. বর্তমান অবস্থান
যেখানে সেখানে সেলফি তুলে লোকেশন ট্যাগ করে দেওয়াটা অনিরাপদ। এর মাধ্যমে যে কেউ আপনার সবশেষ অবস্থান জানতে পারে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে। দেখা গেল, আপনার অবস্থান জেনেই শত্রুপক্ষ আপনার ওপর হামলা করলো।
৫. কখন এবং কোথায় যাচ্ছি
আমরা কখন, কোথায় যাচ্ছি কিংবা ভ্রমণে বের হচ্ছি সে বিষয়টি ফেসবুকে জানিয়ে দেওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। এই বিষয়গুলো জেনে আপনার প্রতিপক্ষ ক্ষতি করতে পারে। হয়তো শত্রুপক্ষ আপনার এমন তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। সেটি জেনে আপনার ওপর হামলা করতে পারে। ফেসবুকে এসব বিষয়ের জানান দেওয়া নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
৬. নির্দিষ্ট স্থান ট্যাগ করা
অনেক সময় ফেসবুকে নিজের অবস্থানের নির্দিষ্ট স্থান ট্যাগ করে দেন অনেকেই। ওই সময় আপনার প্রোফাইল যে ভিজিট করবে, সে জানতে পারবে এখন আপনি কোথায় আছেন। সেটি বাসায় কিংবা অফিসে হোক। দেখা গেল, এভাবে কেউ আপনার বাসা ও অফিসের ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখলো। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে আপনার ক্ষতি করলো। আর এ জন্য ফেসবুকে লোকেশন ট্যাগ করা মোটেও নিরাপদ নয়।
৭. ফোন বা মোবাইল নম্বর
মোবাইল কিংবা ফোন নাম্বার ফেসবুকে উন্মুক্ত করে রাখা মানে প্রাঙ্ক কলার, স্টকার, স্ক্যামার এবং আইডেন্টিটি চোরদের কাছে আপনি একেবারেই অরক্ষিত। পরিচিত ব্যক্তিদের ছাড়া কাউকে ফোন কিংবা মোবাইল নম্বর দেওয়া নিরাপদ নয়।
৮. ক্রেডিট কার্ডের তথ্য
ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে গোপন ও স্পর্শকাতর বিষয়। ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কিংবা ওয়েবসাইট বুঝেই দিতে হবে। যাতে আপনার দেওয়া তথ্য তাদের কাছে সুরক্ষিত থাকে। আর দেরি নয়। সচেতন হবার এখনই সময়।
এছাড়াও বিভিন্ন তথ্য আছে যেগুলোর প্রাইভেসি সেটিংস ‘পাবলিক’না রাখতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, বাড়ি ঠিকানা, পেশা বা কর্মস্থল সংক্রান্ত তথ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিবরণ সবার সাথে শেয়ার না করাই নিরাপদ। এসব তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই অরক্ষিত করে তোলেন নিজেকে। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাই হতে পারে আপনার সুরক্ষার প্রথম ধাপ।