বিশ্ব বিজ্ঞাপনের ১৬’র সেরা দশ

Nike India

এই ট্রেন্ডে গা-ভাসানো আর লোকহাসানো ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস দুনিয়ায় যেখানে এক ঘণ্টা আগের ইভেন্টই দ্রুত হোমফিডের তলানিতে চলে যায়, সেখানে চার মাস আগে গত হওয়া একটি বছরের ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আসা একটু বেশিই ব্যাকডেটেড আচরণ কি না, তা তর্কসাপেক্ষ। তর্ক হলে হোক। ভুলে যাবেন না, বছর শেষ হলেও রেশ কিন্তু রয়েই গেছে। আফটার অল, গেল বছরটাই কিন্তু এভাবেই মনে থাকবে- ‘আরে ওই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিল।’ বলে।

তা রাখুক। মার্কিন ওই ইলেকশন ক্যাম্পেইনের বাইরে কিন্তু আরো অনেক জবরদস্ত ক্যাম্পেইনও (পড়ুন অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন) তাক লাগিয়েছে। সেগুলোরই এক থেকে দশের লিস্টি করেছে আমেরিকান অ্যাডভার্টাইজিং ট্রেড উইকলি ‘অ্যাডউইক’। সে লিস্টিরই ফিরিস্তি এখানে। অবশ্য আমাদের মতো করে। তবে তার আগে দর্শকবৃন্দ, (ওয়েবে তো ভিউয়ার-ই, রিডার আর ক’জন) গেলো বছরের তাক লাগানো সব ক্যাম্পেইনের পেছনে কাজ করা সকল এজেন্সি পারসোনেল, ব্র্যান্ড আর মার্কেটিয়ারের জন্য একটি জোরে হাততালি!

১.    অ্যাপল মিউজিক: টেইলর ভার্সাস ট্রেডমিল; এজেন্সি: ইন-হাউজ

একটা মিউজিক স্টোরের জন্য বিশ্বের সবচে’ বড় পপ সেলিব্রেটিকে এনডোর্স করার চে’ কার্যকরী আইডিয়া আর কী-ই বা হতে পারে। ওটুকুতেই অর্ধেক কাজ শেষ। আর এরপর যদি ধরুন ওই পপ মেগাস্টারকে ট্রেডমিলে আরেক পপস্টারের গান শুনতে শুনতে আর দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মুখ থুবড়ে ফেলে দেয়া যায় … বাকি অর্ধেকের বেশিই ‘জব ওয়েল ডান’! বিশেষ করে ওই শকিং দৃশ্যটা যদি টেইলর সুইফটের চুরানব্বই মিলিয়ন ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ারকেই প্রথম দেখতে হয়, কাজ হবে না বলতে চান?

 

২.    ওল্ড্ স্পাইস: রকেট কার; এজেন্সি: হোয়াইডেন+কেনেডি

ওল্ড্ স্পাইস-এর কমার্শিয়াল মানেই উদ্ভুতুড়ে হিউমারাস কিছু। এটাও ব্যতিক্রম নয়। ‘রকেট গাড়ি’ বানানোর উদ্দেশ্যে নিজের সামর্থ্যের শেষসীমায় পৌঁছে যাওয়া এক ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে বর্ণনার মাঝে রয়েছে নির্মম প্যারোডি’র গন্ধ এবং শেষে, যথারীতি এক হাস্যকর টুইস্ট।

 

৩.    মরটন সল্ট: ‘ওকে গো, দ্য ওয়ান মোমেন্ট; এজেন্সি: ওগালভি অ্যান্ড মাথার

প্রথমে মাত্র ৪.২ সেকেন্ডে হুটহাট অনেক কিছু ঘটে যেতে দেখা যায়। এরপরে এই কয়েক সেকেন্ডের হুটোপুটির মধ্যে চোখে না পড়া অনেক কিছু নিয়ে পাক্কা চার মিনিটের দৃষ্টিসুখকর লম্বা মিউজিক ভিডিও। সব শেষে ব্র্যান্ডের ম্যাসেজ- কিছু জিনিস আমূল বদলে দেয়ার জন্য একটা মুহূর্তই যথেষ্ট। ব্রিলিয়ান্ট!

 

৪.    কেনজো: মাই মিউট্যান্ট ব্রেইন; এজেন্সি: ফ্রেমওয়ার্ক

পারফিউমের বিজ্ঞাপন বলতে যে অভিজাত ও সেন্সুয়াল বিজ্ঞাপন দেখে অভ্যস্ত সেই স্টেরিওটাইপ ভেঙে দিয়েছে কেনজো’র নতুন সুগন্ধির জন্য নির্মিত এই উদ্ভট কমার্শিয়াল মুভি। এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মাঝপথে হতাশ হয়ে বেরিয়ে গিয়ে নিজের ‘মিউট্যান্ট ব্রেইন’-এর তালে অকস্মাৎ আক্রান্ত হওয়া মার্গারেট কোয়েলি’র পারফরমেন্স ছিলো একেবারেই যাকে বলে ‘তারছেঁড়া’!

 

৫.    জিপ: পোর্ট্রেটস; এজেন্সি: আইরিস নিউ ইয়র্ক

পঞ্চাশে পা রাখা সুপার বোল-এর এবারের কমার্শিয়ালগুলোর মধ্যে সেরা বলা হয় এটিকে। তবে অবাক বিষয় হলো টেলিভিশনের হরাইজন্টাল স্ক্রিনে প্রদর্শিত হলেও আইকনিক অটোমোবাইল ব্র্যান্ড ‘জিপ’-এর ৭৫ বছর পূর্তির এই বিজ্ঞাপনটি ছিলো ভার্টিকালি নির্মিত (স্পেসের কী নিদারুণ অপচয়, এদেশে তো এটা ভাবাও যায় না)। কারণ এই বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছে এ যাবত জিপ ব্যবহার করা বিভিন্ন যাত্রীর পোর্ট্রেট। আর পোর্ট্রেট তো মোবাইল ফোনের ভার্টিকাল স্ক্রিনেই ভালো দেখায়। তাই ওটাই সই। আবার টেলিভিশনে অমন ‘ক্রপড’ ভারশনে দেখানো হলে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণও সহজ হবে। ভ্যালিড পয়েন্ট! ওহ্, ভয়েসওভারটাও কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী।

 

৬.    এইচ অ্যান্ড এম: কাম টুগেদার; এজেন্সি: অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ ডিডিবি

অভিনেতা আদ্রিয়ান ব্রডি আর পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসন। কম্বিনেশনটা কিছু কি মনে করালো? হুম, দ্য দার্জিলিং লিমিটেড আর গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল। ব্রডি আর ওয়েস অ্যান্ডারসন ডুয়োর ‘এইচ অ্যান্ড এম’-এর জন্য করা এই ক্রিসমাস কমার্শিয়ালটির ভিজুয়াল ট্রিটমেন্ট বারবার মনে করিয়ে দিবে ওই দু’টি মুভিকে। গল্পটায় চমকও আছে। খারাপ আবহাওয়ার জন্য বিলম্বিত ট্রেন শিডিউলের দরুণ যাত্রীদের ক্রিসমাসের ছুটি যখন ভেস্তে যাবার পথে, তখন এ কী করলেন কন্ডাকটর ব্রডি! (দেখুন ভিডিও সহ)

 

৭.    স্যান্ডি হুক প্রমিজ: ইভান; এজেন্সি: বিবিডিও নিউ ইয়র্ক

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে আরো একটি হাইস্কুল রোমান্স বেইজড কমার্শিয়াল। কিন্তু হলফ্ করে বলতে পারি আগে থেকে বলে না দিলে এই গল্পটির ভয়ঙ্কর টুইস্ট ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারবেন না। এর বেশি কিছু বলবো না। বিবিডিও নিউ ইয়র্কের এই শ্বাসরুদ্ধকর স্টোরিটেলিং নিজেই চাক্ষুষ করুন। আমার ব্যক্তিগত পছন্দের একটি বিজ্ঞাপন।

 

৮.    নাইকি: ডা ডা ডিং; এজেন্সি: হোয়াইডেন+কেনেডি দিল্লি

পুরো ভিডিওটা একবার দেখার পর যদি বাকি দিন মাথার ভেতর ‘ডা-ডা-ডিং, ডা-ডা-ডিং’ না বাজতে থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় আমাকে ইমেইল করে জানাতে পারেন। হোয়াইডেন+কেনেডি’র দিল্লি অফিস অভিষেকেই বাজিমাত করেছে নাইকি’র ব্যানারে তিন মিনিটের এই ‘নারীশক্তি’র বিউটিফুলি পাওয়ারফুল উদ্যাপনে।

 

৯.    অডি: ডুয়েট; এজেন্সি: ভেনাবল্স বেল অ্যান্ড পার্টনার্স

অডি আর এস সেভেনের পার্কিয়ের এখতিয়ার পাওয়া নিয়ে দুই হোটেল ভ্যালে’র মধ্যে লড়াই। আর কী নেই তাতে! হলিউডি সিনেমার চোয়াল ঝোলানো স্টান্ট, চোখ ধাঁধানো কোরিওগ্রাফি, রিভার্স অ্যাকশনের চমক, মানানসই মিউজিক, সবশষে যুৎসই ম্যাসেজ ডেলিভারি দিয়ে দুর্দান্ত ল্যান্ডিং। তবে এজেন্সি মোক্ষম খেলাটা খেলেছে মিডিয়া বায়িংয়ে আমেরিকার প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের মৌসুমে এই দ্বৈরথের বিজ্ঞাপন মুভির রিলিজ করিয়ে। কমার্শিয়ালের বিভিন্ন সিকোয়েন্স আর প্রপসেও কিন্তু ওই ডিবেটের ছাপ স্পষ্ট।

 

১০.   আন্ডার আর্মার: রুল ইয়োরসেলফ-মাইকেল ফেল্পস; এজেন্সি: দ্রগা ফাইভ

হোক না সে মাইকেল ফেল্পস। অলিম্পিকের আসরে নিজের সেরাটা দেয়ার জন্য তাকেও ঢেলে দিতে হয় সামর্থ্যরে সবটুকু। কঠিন পরিশ্রম আর নিদারুণ কষ্টের অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকেও। ‘দ্য লাস্ট গুডবাই’-য়ের সম্মোহনী মিউজিক ট্র্যাকের উপর লোকচক্ষুর অন্তরালে বিদায়ী অলিম্পিকের জন্য ফেল্পসের অমানুষিক প্রস্তুতি নিয়ে বানানো এই স্পটের শেষে ভেসে ওঠে চিরন্তন সত্য- নিভৃতে করা সব পরিশ্রমই মানুষকে নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। দ্রগা ফাইভের আরেকটি মাস্টারপিস দু’হাজার ষোলোর সেরা এই ক্যাম্পেইন।