২০০০ সালে বাংলাদেশের টিভি নাটকের জগতে প্রবেশ করেন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। তিনি এবং তার সহযোগীরা বাংলাদেশের নাটকে এক নতুন কেতা সংযোজন করলেন। তাদের নাটকে শহুরে মধ্যবিত্ত চরিত্রগুলো মার্জিত ভাষার বদলে কথা বলতে শুরু করল চলতি শহুরে ভাষায়। যারা মূলত এই চলতি শহুরে ভাষায় কথা বলে, সেই নাগরিক তরুণ প্রজন্ম এই ভাষার নাটকগুলো বেশ পছন্দও করলো। ফলে কেতাটা টিভি নাটকের জগতে প্রতিষ্ঠাও পেয়ে গেল।
২০০৫ সাল। ততদিনে বাংলাদেশের টিভি নাটকে শহুরে চলতি ভাষায় কথা বলাটাই দুরস্ত হয়ে গেছে। ফারুকী তার সহযোগীদের নিয়ে আগেই গড়ে তুলেছিলেন ছবিয়াল। এবার তাদের নিয়ে টিভিতে আয়োজিত হলো ছবিয়াল উৎসব। ছবিয়ালের নির্মাতারা স্ব স্ব নির্মাণ নিয়ে হাজির হলেন টিভি পর্দায়। এরপর থেকে তারা নিয়মিতই টিভি নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করতে লাগলেন।
এখন ছবিয়ালের প্রায় সবাই-ই টিভি জগতের প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা। নিয়মিত টিভি নাটক নির্মাণ করছেন প্রায় সবাই। কয়েকজন তো ইতিমধ্যে একাধিক চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে ফেলেছেন। ফারুকী নিজে নির্মাণ করেছেন ৫টি চলচ্চিত্র। একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন রেদোয়ান রনি ও মোস্তফা কামাল রাজ। সব মিলিয়ে ছবিয়ালের সবাই-ই ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ত হয়ে পরেছেন। আর তাই ছবিয়ালের হয়ে আর কাজ করা হচ্ছিল না।
এবারের ঈদে আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজের ঘোষণার দুই সপ্তাহের মাথায় ঘোষণা এলো ছবিয়ালের পক্ষ থেকেও। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, এই ঈদে টিভি পর্দায় থাকছেন তারাও। বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছবিয়াল নির্মাণ করবে বেশ কিছু টিভি প্রযোজনা। এ বাবদে একজোট হয়েছেন দশ পরিচালক- মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, রেদোয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, মোস্তফা কামাল রাজ, সরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, আলি ফিদা একরাম তোজো, গোলাম কিবরিয়া ফারুকী, হুমায়ূন সাধু, ইশতিয়াক রোমেল, মাহমুদুল ইসলাম ও আদনান আল রাজীব।
এই ছবিয়াল গোষ্ঠীর হাত ধরেই বাংলাদেশের টিভি নাটকের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছিল- ভাষার পরিবর্তন। তাতে নতুন করে টিভি নাটকের দর্শক সৃষ্টি হয়েছিল। এখন সামগ্রিকভাবে এই টিভি নাটকই এক ধরনের হুমকির মুখে। দর্শকদের অব্যাহত চাহিদার মুখে চ্যানেলগুলোও একের পর এক ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিজ চালাচ্ছে। এমন সময়ে ছবিয়াল গোষ্ঠীর একজোট হয়ে এই ‘নতুন করে কাজ করার চেষ্টা’র প্রতি এক ধরনের আগ্রহ নিয়েই তাকাতে হয়। ছবিয়ালের উদ্যোগ, আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ- এসব মিলিয়ে এই ঈদে হয়তো বাংলাদেশের টিভিজগতে নতুন কিছুরই সূচনা হতে যাচ্ছে। তা যদি নাও হয়, এই দুই উদ্যোগের ফলে দর্শকরা যে অন্তত কিছু চমকের দেখা পেতে যাচ্ছেন, তা এক রকম নিশ্চিত।