সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র : সম্পূর্ন রঙিন সাত

সাদা কালো যুগের চলচ্চিত্রের গল্পতো শুনলেন, এবারে হোক ঝলমলে, ঝা চকচকে লাল নীল গল্পের কথা। সাহিত্যকর্ম থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের রীতি ঢাকার চলচ্চিত্রে কখনোই তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। গত কয়েক দশকে অবশ্য মূল ধারার বাইরে থেকে এই ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে সাহিত্যকর্ম থেকে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রের যে সংকট চলছে, তার জন্য টোটকা বাতলাতে গিয়েও অনেকেই এই রীতি অনুসরণের কথাও বলে আসছেন। আর এই টোটকাটা যে নেহায়েত খেলো নয়, তার প্রমাণ হিসেবে প্রথম পর্বের চলচ্চিত্রগুলো তো থাকছেই, পাশাপাশি সম্প্রতি নির্মিত সাহিত্য অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্রগুলোও হতে পারে বড় প্রমাণ।

সেলিনা হোসেনের পোকা মাকড়ের ঘরবসতি থেকে একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন আখতারুজ্জামান

পোকা মাকড়ের ঘরবসতি (১৯৯৬)

দক্ষিণাঞ্চলের জেলেদের জীবন নিয়ে সেলিনা হোসেন ১৯৮৬ সালে একটি উপন্যাস লেখেন। নাম পোকা মাকড়ের ঘরবসতি। এই উপন্যাস থেকে একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন আখতারুজ্জামান, ১৯৯৬ সালে। প্রযোজনা করেন নায়িকা ববিতা। নায়িকা চরিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। আরো অভিনয় করেন আলমগীর, খালেদ খান ও রওশন জামিল।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস থেকে দীপু নাম্বার টু নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম

দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬)

১৯৯৬ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবালের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস দীপু নাম্বার টু থেকে মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেন একই নামের এই চলচ্চিত্রটি। বাংলাদেশের অন্যতম এই শিশুতোষ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুই বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করে দুই নবাগত শিশুশিল্পী অরুণ সাহা (দীপু) ও শুভাশীষ রায় (তারেক)। দীপুর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, মার চরিত্রে ববিতা। অন্যান্যদের মধ্যে অভিনয় করেন গোলাম মুস্তাফা, ডলি জহুর, শামসুজ্জামান খান বেনু, আবুল খায়ের, কেরামত মাওলা, মাসুদ আলী খান, আবদুল আজিজ প্রমুখ।

একই নামের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস থেকে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন হাঙর নদী গ্রেনেড

হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭)

১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন হাঙর নদী গ্রেনেড, সেলিনা হোসেনের একই নামের উপন্যাস থেকে। মুক্তিযুদ্ধের এই উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়নে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন সুচরিতা, সোহেল রানা ও অরুণা বিশ্বাস। চলচ্চিত্রটিতে পরিচালক নিজেও একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বিখ্যাত উপন্যাস লালসালু থেকে তানভীর মোকাম্মেল একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন

লালসালু (২০০১)

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বিখ্যাত উপন্যাস লালসালু (১৯৪৮) থেকে ২০০১ সালে একই নামের চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন তানভীর মোকাম্মেল। অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, মুনিরা ইউসুফ মিমি, চাঁদনী, আলী যাকের, রওশন জামিল, চিত্রলেখা গুহ প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি মোট ৮ ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয়।

শহীদুল ইসলাম খোকনের বাঙলা চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে শাবনূর ও মাহফুজ

বাঙলা (২০০৬)

উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত আহমদ ছফার অনন্য উপন্যাস ওঙ্কার (১৯৯৩)। ২০০৬ সালে উপন্যাসটি থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন শহীদুল ইসলাম খোকন- বাঙলা নামে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনয় করেন মাহফুজ, শাবনূর ও হুমায়ুন ফরীদি।

সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান থেকে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন গেরিলা

গেরিলা (২০১১)

সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান থেকে ২০১১ সালে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেন গেরিলা। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে জয়া আহসান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন। সুরকার আলতাফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেন আহমেদ রুবেল। প্রধান চরিত্রগুলোতে আরো অভিনয় করেন ফেরদৌস, শম্পা রেজা, এটিএম শামসুজ্জামান, শতাব্দী ওয়াদুদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম মাওলা শ্যামল, মাসুম আজিজ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মুক্তিযুদ্ধের গল্প রেইনকোট থেকে জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মাণ করেন মেঘমল্লার

মেঘমল্লার (২০১৪)

শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‍মুক্তিযুদ্ধের গল্প রেইনকোট অবলম্বনে ২০১৪ সালে জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মাণ করেন মেঘমল্লার। চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন শহীদুজ্জামান সেলিম, অপর্ণা ঘোষ ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন মারজান হোসেন জারা।