ড্রাগনস্টোনঃ এক দুর্ভাগ্য দ্বীপের গল্প


Winter is here!

গেম অফ থ্রোনসের ৭ম সিজন শুরু হচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। এইচবিওর সুপারহিট টিভি সিরিজটির এবারের সিজনটি বেশ কিছু দিক দিয়েই আগের সিজনগুলো থেকে ব্যতিক্রমী। গল্পের চমকগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে, তাছাড়া এপিসোডের সংখ্যাও এবার অন্যান্যবারের চেয়ে কম, মাত্র সাতটি এপিসোড দেখানো হবে এ সিজনে। টিভি শোটির নির্মাতারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ৭ম ও ৮ম সিজন মিলিয়ে মোট ১৫টি এপিসোডেই এপিক এই সিরিজের গল্পের সমাপ্তি টানা হবে। এবারের সিজনে তাই ১০ এপিসোডের জায়গায় রয়েছে মাত্র সাতটি এপিসোড, আর ৮ম অর্থাৎ শেষ সিজনে পর্ব থাকবে আটটি।
গত সপ্তাহে এইচবিও প্রথম তিনটি এপিসোডের নাম প্রকাশ করে। প্রথম এপিসোড বা সিজন প্রিমিয়ার পর্বের নাম ‘ড্রাগনস্টোন’। গেল সিজনের ফিনালের একদম শেষ দৃশ্যে দর্শকরা দেখেছিলেন যে, ডেনেরিস টারগারিয়েন (ড্যানি) এত বছরের বাধা-বিপত্তি (এবং আমাদের অপেক্ষা) পেরিয়ে অবশেষে ওয়েস্টেরোসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সাথে আনসালি’ড পদাতিক, ডোথরাকি ঘোড়সওয়ার, আর আয়রন আইল্যান্ডের ইয়ারা ও থিওন গ্রেজয়ের বিশাল নৌবাহিনী। প্রিমিয়ারের ‘ড্রাগনস্টোন’ নাম তাই ড্যানির দিকেই ইঙ্গিত করে।
স্ট্যানিস ব্যারাথিওন উইন্টারফেলের যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর থেকে ড্রাগনস্টোন মূলত অরক্ষিতই আছে। কিংস ল্যান্ডিংয়ে সার্সেই ল্যানিস্টারের নিজের অবস্থাও বেশ নাজুক ছিল। তাই স্ট্যানিসের অনুপস্থিতির সুযোগে সে ড্রাগনস্টোন দখল করতে পারেনি। আর এতদিনে নিজের ক্ষমতা ফিরে পেলেও কিংস ল্যান্ডিংয়ের নাজেহাল অবস্থা সামলাতেই তার মনোযোগ বেশি থাকবে। এই সুযোগে ড্যানি এসে এখানেই অবতরণ করার কথা। হাজার হোক, ড্রাগনস্টোন তার জন্মভূমি, আক্ষরিক অর্থেই!

ড্রাগনস্টোনের দুয়ারে ডেনেরিস টারগারিয়েন

না-দেখা এপিসোডে কী কী ঘটতে পারে সেদিকে নাই বা গেলাম, বরঞ্চ একটু পিছনে ফিরে তাকাব ড্রাগনস্টোনের ইতিহাসের দিকে।  এই দ্বীপে একই নামের প্রাসাদের সাথে টারগারিয়েনদের প্রায় সাড়ে চারশ বছরের ইতিহাস জমে আছে। ড্রাগনস্টোন মূলত সমুদ্রে ডুবে থাকা এক প্রকাণ্ড আগ্নেয়গিরির চূড়া। পাথুরে দ্বীপটি যেন পানি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। সমুদ্রের ওপরে যেটুকু আছে, পুরোটাই পাথুরে জ্বালামুখ। আর সেই জ্বালামুখের সবচেয়ে উঁচুতে ড্রাগনস্টোন প্রাসাদ। বর্তমান সময়ের প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে ভ্যালেরিয়ার সভ্যতার পতন হয়। ওয়েস্টেরোসের তুলনায় ভ্যালেরিয়া প্রাচুর্যে ও সৌকর্যে অনেক সমৃদ্ধ ছিল। এসোসের সবগুলো নগরের মাঝে ভ্যালেরিয়ার সম্পদও ছিল সবচেয়ে বেশি। সেসময়ের ওয়েস্টেরোস ছিল অনুন্নত, আর বিভিন্ন রাজা-রাজড়ার সংঘর্ষের কারণে জীবনযাপনের জন্যেও অনিরাপদ। ভ্যালেরিয়ার এই উন্নতি আর ক্ষমতার মূল কারণ ড্রাগন। টারগারিয়েনরা ছিল ‘ড্রাগন লর্ড’ ফ্যামিলিগুলোর অন্যতম। তারাসহ সকল ড্রাগন লর্ডই কালো জাদুবিদ্যার মাধ্যমে ড্রাগনদের বশে আনতে সক্ষম হয়েছিল। এই উন্নত আর প্রাচুর্যময় সভ্যতাও একসময় হুট করেই ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনাকেই বলা হয় ‘ডুম অফ ভ্যালেরিয়া’। ধ্বংসের কারণ এখনো কেউ সঠিক জানে না। টারগারিয়েনদের পরিবারের এক কন্যা ডেনিস টারগারিয়েন একদিন স্বপ্নে দেখে যে অচিরেই ভ্যালেরিয়ার পতন ঘটবে। সে তার বাবাকে এই ভয়ানক দুঃস্বপ্নের কথা জানায়। মূলত তার প্রবল জোরাজুরিতেই তার বাবা এয়নার টারগারিয়েন নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে এসে ওঠেন এই ড্রাগনস্টোনে।

ভ্যালেরিয়ান ফ্রি-হোল্ড

সময়টা ‘ডুম অফ ভ্যালেরিয়া’র প্রায় ১২ বছর আগের কথা। টারগারিয়েনদের এই সহসা প্রস্থানকে বেশিরভাগ ড্রাগন লর্ড ফ্যামিলিই পরিহাসের চোখে দেখেছিল। তারা কেউই ডেনিসের দুঃস্বপ্নকে পাত্তা দেয় নি। উল্টো মেয়ের আজগুবি কথায় ভিটেমাটি ছেড়ে ‘পালিয়ে যাওয়া’ এয়নারকে কাপুরুষের নিন্দাও শুনতে হয়েছে। এক যুগ পরে সেই আজগুবি সতর্কবাণীই একদিন সত্যি হল। পরাক্রমশালী ড্রাগন লর্ডদের সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আর কোনদিনই ভ্যালেরিয়ায় কোন মানুষের বাসস্থান গড়ে উঠলো না। এর প্রায় সাড়ে চারশ বছর পরেও একে ঘিরে নানা রকম ভয়াল মিথ আর গপ্পোগুজবই মানুষ শুনে আসছে। এমনকি নৌজাহাজগুলোও এর ধারেকাছে যায় না।

সেই থেকে ড্রাগনস্টোনই টারগারিয়েন হাউজের নতুন ঠিকানা হল। এসোস থেকে এসে দ্বীপে আশ্রয় নেয়ায় তারা পুরোপুরি ওয়েস্টেরোসে মিশে গেল না। আবার খুব কাছাকাছি হওয়ায় একেবারে আলাদাও থাকল না। এসোসের অন্যান্য শহরগুলোর সাথে তখন তাদের অনেক দূরত্ব – মাঝে বিস্তীর্ণ ‘ন্যারো সি’। ড্রাগনস্টোনের আশেপাশে ওয়েস্টেরোসের মূল ভূখণ্ডে আরও কয়েকটি ভ্যালেরিয়ান ফ্যামিলি নিজেদের অবস্থান নেয়, যাদের সাথে ধীরে ধীরে ড্রাগনস্টোনের তথা টারগারিয়েনদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। ভ্যালেরিয়ান পেনিনসুলা থেকে নিজেদের সব ধনসম্পদই তারা তুলে এনেছিল। সাথে নিয়ে এসেছিল তাদের পাঁচটি ড্রাগন। ডুমের পর যেহেতু তারাই একমাত্র টিকে থাকা ড্রাগন লর্ড, সেহেতু তাদের সাথে আশেপাশে ফ্যামিলিরা খাতির জমিয়ে রাখবে এটাই স্বাভাবিক।

টারগারিয়েনদের ড্রাগনস্টোন যাত্রা

ড্রাগনস্টোনের অবস্থান কিংস ল্যান্ডিং থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ মাইল দূরে ব্ল্যাকওয়াটার বে’র মুখে। উত্তাল সমুদ্রের মাঝখানে বিদ্রোহীর মতো একটা কালো পাথুরে দ্বীপ আর তার চূড়ায় ভয়াল-দর্শন ড্রাগনের আকৃতির মিনারে সজ্জিত প্রাসাদ। কথিত আছে যে এয়নার এবং তার পরবর্তী টারগারিয়েন লর্ডরা ভ্যালিরিয়ান কালো-জাদু দিয়ে পাথর আর ড্রাগনগ্লাসকে বেঁধে এই প্রাসাদ তৈরি করেছেন। ড্রাগনগ্লাস হল দ্বীপের পাদদেশে এবং পাহাড়ের ভূ-গর্ভস্থ খনিতে পাওয়া এক ধরনের পাথর। এর আরেক নাম অবসিডিয়ান। প্রচণ্ড দৃঢ় কিন্তু মসৃণ এই পাথর নিয়েও নানারকম মিথ প্রচলিত আছে। অনেকে দাবি করে যে ড্রাগনগ্লাস বা অবসিডিয়ান দিয়ে হোয়াইট ওয়াকারদের মারা যায়। স্যাম টারলি ‘ফিস্ট অফ দ্যা ফার্স্ট মেন’-এ পাওয়া ড্রাগনগ্লাস দিয়েই হোয়াইট ওয়াকারকে মেরেছিল। এজন্য অনেকে মনে করে ড্রাগনস্টোনের উঁচু মিনারগুলো আসলে কালো-জাদু দিয়ে পাথর বানিয়ে রাখা ড্রাগন। কোন এক মারাত্মক জাদু দিয়ে তাদের জাগিয়ে তোলা যাবে। মিথগুলো বাদ দিলেও ড্রাগনস্টোনের এরকম ভয়ালদর্শন রূপ দাঁড় করানোর অন্য বাস্তবিক কারণও ছিল বটে। টারগারিয়েনরা ওয়েস্টেরোসে বহিরাগত হিসেবে এসে মূল ভূখণ্ডের খুব কাছে একটা ঘাঁটি গেঁড়েছে, এটা অনেক ওয়েস্টেরোসি লর্ডের পছন্দ না-ই হতে পারে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের হিংস্র ও ভয়ানক হিসেবে দেখানো দরকার ছিল। শত শত বছর ধরে এই ড্রাগনস্টোনের পাথুরে দেয়াল শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। আর চারপাশের উত্তাল সমুদ্রও কম সাহায্য করেনি।

ড্রাগনস্টোন

এয়নারের পরে প্রায় একশ বছর পর্যন্ত টারগারিয়েনরা শুধু ড্রাগনস্টোনেই সীমাবদ্ধ ছিল। ডুম অফ ভ্যালেরিয়ার ১১৪ বছর পরে এয়গন টারগারিয়েন তার দুই বোন (এবং স্ত্রী) ভাইসেনিয়া ও রেয়নিস টারগারিয়েনকে নিয়ে ওয়েস্টেরোসের মূল ভূখণ্ডে পা রাখে। তারা নৌ বা স্থলপথে আসেনি, এসেছিল তিন প্রকাণ্ড ড্রাগনে চেপে। এয়গন যে স্থানে এসে প্রথম নেমেছিল, সেখানেই ধীরে ধীরে কিংস ল্যান্ডিং রাজধানী গড়ে ওঠে। এরপর প্রায় দুই বছরের মধ্যে একে একে সাতটির মধ্যে ছয়টি রাজ্যই এয়গনের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। কেউ করে শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণ, কেউ বা সম্মুখযুদ্ধে হেরে নতিস্বীকার করে, আর কেউ কেউ স্রেফ অহঙ্কার আর জেদের বশে ড্রাগনের আগুনে পুড়ে মরে। একমাত্র ডর্ন রাজ্যকে এয়গন কিছুতেই আয়ত্বে আনতে পারে নি, বারবার আক্রমণ পরে পরাস্ত হয়েছে। কিংস ল্যান্ডিংকে নিজের রাজধানী বানানোর পরে ড্রাগনস্টোন হয়ে উঠলো রাজার উত্তরসূরীর ঠিকানা। সিংহাসনের পরবর্তী দাবিদারকে ‘প্রিন্স অফ ড্রাগনস্টোন’ খেতাব দেয়া হতো আর রাজার মৃত্যুর পর সে কিংস ল্যান্ডিংয়ে চলে আসতো। এই ব্যবস্থার একটা সুবিধা হচ্ছে প্রিন্সকে রাজধানী থেকে দূরে রাখলে অভ্যুত্থান ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়।

যদিও শত শত বছর ধরে ড্রাগনস্টোন টারগারিয়েনদের মূল ঠিকানা, বেশিরভাগ ভবিষ্যৎ রাজাই সেখানে বড় হয়েছে, তবুও এই প্রাসাদের সাথে তাদের অনেকেরই বিষাদমাখা পরিণতিও মিশে আছে। বাইরে থেকে ভয়াল ও হিংস্রদর্শন এই প্রাসাদ যেন অন্দরমহলেও একেক রাজাকে ভয়ানক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এয়গন টারগারিয়েন এই প্রাসাদেই স্ট্রোক করে মারা যান। এয়গনের ছেলে এয়নিস টারগারিয়েনের রাজত্বে প্রথমবারের মত ফেইথ মিলিট্যান্টদের উত্থান ঘটেছিল। ধর্মীয় উন্মাদ এই গোত্র কত ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াতে পারে তা আমরা সার্সেই-এর পরিণতি থেকে দেখেছিলাম। ফেইথ মিলিট্যান্টদের বিপ্লব থেকে বাঁচতে এয়নিস টারগারিয়েন কিংস ল্যান্ডিং থেকে পালিয়ে ড্রাগনস্টোনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার ভাই মেয়গর টারগারিয়েন (মেয়গর দ্যা ক্রুয়েল) সিংহাসনে আরোহণ করেন। ফেইথ মিলিট্যান্টদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করায় তার এই সুনাম (!) জুটেছিল। রাজত্বকালে সিংহাসনের পথে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সবাইকেই মেয়গর বন্দি করে রাখতেন। এমনকি নিজের বড় ভাই এয়নিসের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও মেয়গর ড্রাগনস্টোনে বন্দী করেছিলেন।

রায়েনারা টারগারিয়েনের মৃত্যু

এর পরের বড় ঘটনাটি সম্ভবত ড্রাগনস্টোনের ইতিহাসে করুণতম ঘটনা। বর্তমান সময়ের প্রায় দেড়শ বছর আগে টারগারিয়েনদের ভেতরে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। রায়েনারা টারগারিয়েন ছিলেন ‘প্রিন্সেস অফ ড্রাগনস্টোন’। ওয়েস্টেরোসের ইতিহাসের প্রথম নারী যার কুইন হবার কথা ছিল। কিন্তু তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ২য় এয়গন টারগারিয়েন সিংহাসন দাবি করে বসে। শুরু হয় কুখ্যাত ‘ড্যান্স অফ দ্যা ড্রাগন’ যুদ্ধ যার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। টারগারিয়েন ফ্যামিলির অধিকাংশ ড্রাগন ও সদস্যই এই যুদ্ধে মারা যায়। যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল ড্রাগনস্টোনেই। ‘কিং’ ২য় এয়গনের ড্রাগন প্রিন্সেস রায়েনারাকে জীবিত অবস্থায় খেয়ে ফেলে তারই ছোট ছেলের (৩য় এয়গন) সামনে।

ড্রাগনস্টোনের মাটি স্পর্শ করছে ডেনেরিস

ডেনেরিসের জীবনের দুঃখের ঘটনা কম নেই। কিন্তু তারও শুরুটা এই ড্রাগনস্টোনেই। রবার্ট ব্যারাথিওন যখন ম্যাড কিং এয়রিস টারগারিয়েনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তখন রাজার ছেলে রেয়গার টারগারিয়েন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। সে যুদ্ধে রেয়গার মারা যাওয়ার খবর পেয়ে রাজা এয়রিস তার ছোট ছেলে ভাইসেরিস ও তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ড্রাগনস্টোনে পাঠিয়ে দেন। এর পরপরই টাইউইন ল্যানিস্টার এসে কিংস ল্যান্ডিং তছনছ করে ফেলে, আর জেইমির হাতে মারা যান ম্যাড কিং এয়রিস। এর প্রায় নয় মাস পরে ডেনেরিসের জন্ম ড্রাগনস্টোনে। তার জন্মের সময় তুমুল ঝড়ে দ্বীপের কাছে রাখা টারগারিয়েনদের অবশিষ্ট নৌবাহিনীর সব জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মাও মারা যায়। ভাইসেরিস তখন ডেনেরিসকে নিয়ে কোনমতে এসোসে পালিয়ে বাঁচে। এরপর থেকে বাকি জীবন, জ্ঞান হবার পর থেকেই ডেনেরিস শুনে আসছে ওয়েস্টেরোসের কথা। ওখানে তাদের জন্মভূমি। ওখানে মানুষ নাকি আজও তাদের দুই ভাইবোনকে নিজেদের রাজাধিরাজ মনে করে। ড্রাগনস্টোনে ঝড়ের রাতে তার জন্ম বলে নিজেকে স্টর্মবর্ন খেতাব দিয়েছে সে।

ড্রাগনস্টোনে ডেনেরিস

এত প্রতীক্ষা আর ত্যাগের পর অবশেষে জন্মভূমি ড্রাগনস্টোনে ফিরে আসছে। এখানে তো তার আপন কেউ নেই। সেই পেনটস থেকে ভায়’স ডোথরাক, সেখান থেকে রেড ওয়েস্ট পাড়ি দিয়ে ক্বার্থ, তারপর আস্তাপর, ইয়ুঙ্কাই, মিরিন হয়ে আসতে আসতে সে কত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছে! কত জন তার আপন হয়েছে, বন্ধু হয়েছে, অনুগত অনুসারী, পাশে চলা উপদেষ্টা… কতজন। এরা প্রায় কেউই ওয়েস্টেরোসের না। বরং ওয়েস্টেরোস থেকে আসা অনেকেই তাকে ঠকিয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, ধোঁকা দিয়েছে। তারপরও কেন এখানে এসেই তার অন্যরকম লাগে? এই ড্রাগনস্টোনের পাথুরে আগ্নেয় মাটির কী এমন টান? এই জন্মভূমি কি তাকে সাদরে বরণ করে নিবে? নাকি এখানেই তার পূর্বপুরুষদের মত তার দুঃখমাখা সমাপ্তি হবে?