পরিষ্কারের অন্য লেভেলের মানে দেখালো টাইড

মার্কেট লিডার হচ্ছে ক্যাটেগরির সেরা প্লেয়ার। ক্যাটেগরির দুই বা তিন নম্বর খেলোয়াড়রা যেখানে পণ্যের নির্দিষ্ট কোনো একটা বিষয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চাইবে, মার্কেট লিডার দাপটের সাথে ক্যাটেগরি বেনিফিটেই নিজের একচ্ছত্র আধিপত্যের কথা জানাবে। আমেরিকান মার্কেটে প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর (পি অ্যান্ড জি) ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ড ‘টাইড’ ঠিক তাই করে আসছে। ২০১৭-য় আমেরিকায় টাইড-এর বিক্রি ১০০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর বিক্রি পার হয়নি ৬০০ মিলিয়নও(সূত্র: www.statista.com)। তো, এই চারশো মিলিয়ন এগিয়ে থাকার শক্তিতে ‘টাইড’ দাবি করে আসছে ডিটারজেন্ট ক্যাটেগরির মূল সুবিধাটাই- পরিষ্কার ও সুন্দর কাপড়ের প্রতিশ্রুতি। তবে এবার সুপার বোল-এ যা দেখিয়েছে তেমনটা করে কখনোই বলেনি।

মেগা ক্রিকেট ইভেন্টগুলোয় বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর যে অবস্থা হয়, সুপার বোলের সময় আমেরিকায় হয় ঠিক তেমনটাই। সব বয়সী ছেলে-বুড়ো তো বটেই, সিনেটর থেকে জেনিটর সবাই এই সুপার বোলের সময় বসে যায় টেলিভিশন সেটের সামনে। ড্রয়িংরুমে, রেস্টুরেন্টে, ক্লাবে বা পাবে খেলার সময় খেলাকে ঘিরেই হবে বাকিসব। বলা হয় আমেরিকান টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্ট এটি। ওহ্ কী এই সুপার বোল তাই-ই বলা হয়নি? সুপার বোল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) চূড়ান্ত পর্বের খেলা। তুমুল জনপ্রিয় খেলার মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই চলে বিজ্ঞাপন প্রচারেরও ধুম। আর যেহেতু একসাথে প্রায় বারো কোটির মতো অডিয়েন্স এই সময় পাওয়া যায় তাই বিজ্ঞাপনের মূল্যও থাকে গ্যালাক্সি ছোঁয়া। এক একটি সেকেন্ডে বিজ্ঞাপন চালাতে খরচ পড়ে কোটির ওপরে। তবে ভাববেন না দর্শকরা খুশি খুশি বিজ্ঞাপন হজম করেন। ওখানকার দর্শকের মাইন্ডসেটও এখানকার মতোই। খেলার মাঝে হুট করে বিজ্ঞাপন চলে এলে তারাও আমাদের মতোই বিরক্ত হন। আর তাই মার্কেটিয়ার আর অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিগুলোর লোকজন সুপার বোলের আগে আগে মাথার চুল-রাতের ঘুম দুই-ই হারান। কীভাবে ওই বিরক্তির মুহূর্তেও দর্শকের মাথায় বিজ্ঞাপনের বার্তাটি পৌঁছে দেবেন সেই দুশ্চিন্তায়। এমনই ঘোর প্রতিযোগিতার ফাঁক দিয়েও ফি-বছর আমরা পেয়ে যাই তাক লাগানো এবং কার্যকর কিছু বিজ্ঞাপন। এ বছরে যে বাজিমাতখানা করেছে টাইড।

তা কী করেছে এমন টাইড? যা করেছে তাতে সুপার বোলের প্রতিটা বিজ্ঞাপন দেখার সময় দর্শকের মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরেছে, এটাও ‘টাইড’ অ্যাড না তো? কারণ টিভি সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর জিম হপার চরিত্রের জন্য বিখ্যাত (ভদ্রলোক সুইসাইড স্কোয়াডেও ছিলেন, কিন্তু সেই ভয়ংকর মুভিটির কথা মনে না করলেও চলে) ডেভিড হারবার নিজের ব্রিলিয়ান্ট উপস্থিতি দিয়ে প্রতিটা টাইড-অ্যাডে এমনভাবে তাক লাগিয়েছেন যে কি আর বলবো। তবে তার উপস্থিতি ভ্যালু অ্যাড করেছে কেবল। আসল খেলাটা আইডিয়ার। যার জন্য সাচি অ্যান্ড সাচি আর পি অ্যান্ড জি-র ধন্যবাদ প্রাপ্য।

এক মিনিটের স্পট বাদেও ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটা স্পট তৈরি করেছিলো টাইড। আর প্রতিটাই বিভিন্ন পণ্যের স্টেরিওটাইপড অ্যাড, মানে যেরকম দৃশ্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে এর আগে দেখে এসেছি আমরা। দেখতে দেখতে দর্শক ধরেই নেবে এটা হয় ওই পরিচিত শেভিং ফোমের অ্যাড, কিংবা বিয়ার, কিংবা অভিজাত গাড়ির অ্যাড। কিন্তু প্রতিটিতেই একটা টুইস্ট। ডেভিডের মুখ দিয়ে শোনা যায়- “ইটস আ টাইড অ্যাড”! আর বলছি না। দেখে নিন আগে।

 

তো কেন ওই সবগুলো বিজ্ঞাপনই টাইড-এর বিজ্ঞাপন হতে পারে সে উত্তর আপনারা পেয়ে গেছেন আশা করি। ক্যাটেগরি বেনিফিটে নিজের কর্তৃত্ব ফলানোর এই একটি মজা। যে বিজ্ঞাপনেই সুন্দর আর পরিষ্কার কাপড় সেটাই টাইডের অ্যাড! ওই যে বললাম এবারের সুপার বোলের ব্রেকে টিভি দেখতে দেখতে দর্শক অন্য পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেলের পরনে পরিষ্কার কাপড় দেখলেও আঁতকে উঠেছে মনে মনে। এটাও টাইড অ্যাড নয় তো? সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

এজন্য সাচি অ্যান্ড সাচি-কে (টাইড-এর এজেন্সি) বিজ্ঞাপনের মিডিয়া বুকিংয়েও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়েছে। নিশ্চিত করতে হয়েছে যাতে ‘টাইড’এর বিজ্ঞাপনের সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকে। তাইতো খেলার প্রতিটা কোয়ার্টারেই ছিলো টাইড-এর উপস্থিতি। পরিকল্পনাটাও ছিল সেভাবেই। প্রথম কোয়ার্টারে ৪৫ সেকেন্ড স্পট। আর পরের তিনটি কোয়ার্টারে তিনটা ১৫ সেকেন্ডের স্পট। তাতেই বারো কোটির মতো দর্শকের মাথায় পৌঁছে গেছে মূল বার্তা, যেখানেই পরিষ্কার জামা, বুঝবে ওখানেই আছে টাইড। কারণ টাইড মানেই পরিষ্কার।

জব ওয়েলডান টাইড আর পি অ্যান্ড জি। জব ওয়েলডান সাচি অ্যান্ড সাচি। সুপার বোল ২০১৮-র সেরা বিজ্ঞাপন আপনাদেরই।